বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়ে থাকে। এর বেশিরভাগ অংশ পটুয়াখালী এবং বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা উৎপাদন করে থাকে । বারি মুগ-৬ ওই অঞ্চলে কৃষকদের এক ফশলী জমিকে দুই ফসলী জমিতে রূপান্তর করেছে। মুগ ডাল আমিষের একটি অন্যতম উৎস। যা গরীব কৃষকদের আমিষের চাহিদা পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। কিন্তু এই অঞ্চলে উৎপাদিত এই মুগ ডালগুলো অঞ্চলের কৃষকরা খুব কমই ভক্ষণ করতে পারে। কারণ এই মুগ ডালের খোসা ছাড়িয়ে খাবার উপযোগী ডাল উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সহজলভ্য হয়নি। সাধারণত দক্ষিণাঞ্চল উৎপাদিত মুগ ডাল বড় বড় ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে বড় বড় মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করে অধিক মূল্যে বাজারে বিক্রয় করে থাকে যা কৃষকদের জন্য সহজলভ্য হয় না। কৃষকদের আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত মুগডাল কৃষকরা যাতে সহজে প্রক্রিয়াজাত করে ভক্ষণ করতে পারে এজন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ফার্ম মেশিনারী এন্ড পোস্টহারভেষ্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে কৃষকের ব্যবহার উপযোগী বারি মুগ ডাল ভাঙ্গানো যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে অতি সহজে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৭০ কেজি মুগডাল ভাঙানো যায়। কৃষকের কাছে সহজ প্রাপ্য চার ঘোড়ার ডিজেল ইঞ্জিন কর্তৃক চালনা করা যায়। এ যন্ত্রটি স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকরা ব্যবসায়ী হিসেবে চালনা করতে পারে। যার ফলে প্রান্তিক কৃষকরা গ্রামগঞ্জে স্থানীয় কৃষিযন্ত্র সেবা দানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। এ যন্ত্রটিতে তিনটি চাকা রয়েছে যার মাধ্যমে সহজেই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে, এমনকি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত মুগ ডাল ভাঙার পরিমাণ খুবই নগণ্য। এমনকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুই ধাপে তেল মাখিয়ে ডাল ভাঙ্গালে ২০ থেকে ৩০ ভাগ আস্ত ডাল পাওয়া সম্ভব।
নব উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটির বিভিন্ন সুবিধাবলি কৃষক, যন্ত্র প্রস্তুত কারক, বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মী ও সাধারণ জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য এফএনপি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গাজীপুর এর আয়োজনে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্রের সিসা-এমইএ প্রকল্পের অর্থায়নে ১০ জুলাই ২০২৪ রোজ বুধবার ঝিনাইদহ জেলার হাট গোপালপুর এ এক মাঠ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
প্রান্তিক পর্যায়ে এ যন্ত্রটি ছড়িয়ে দিতে বারি উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটির ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। মানসম্পন্ন প্রস্তুতকরণ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানদের প্রশিক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ যন্ত্র উদ্ভাবনে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত সিরিয়াল সিস্টেম ইনিসিয়েটিভ ফর মেকানাইজেশন এক্সটেনশন অ্যাক্টিভিটিস (সিসা-এমইএ) প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি যন্ত্র প্রস্তুতকারকদের সরাসরি অংশগ্রহণে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বারি ও সিসা-এমইএ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ডঃ মুহাম্মদ এরশাদুল হক জানান, এ যন্ত্র উদ্ভাবনের গবেষণার সাথে ঝিনাইদহ এর মাওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং বগুড়া এর হক মেটাল এই দুইটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত ছিলেন; ফলে এই যন্ত্র নির্ভুলভাবে প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো ইতিমধ্যে ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা রপ্ত করেছেন।
অনুষ্ঠানে যন্ত্র উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক, যন্ত্রের বিভিন্ন কারিগরি দিক তুলে ধরেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, কৃষকের অর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য বারি মুগ ডাল ভাঙানো যন্ত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
কৃষকরা তাদের বক্তৃতায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে,এটি একটি অবিস্মরণীয় উদ্ভাবন। আরো বলেন, এ অঞ্চলে কৃষকরা বারি মুগ ডাল ভাঙানোর যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যবসায়িকভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে মুগডাল ভাঙানোর সুবিধা পাবে ফলে খাবার পরিমাণ বাড়বে এবং জনসাধারণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। সদাশয় সরকার যদি এই যন্ত্রে ভর্তুকি প্রদান করেন এবং স্বল্পমূল্যে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঝে এই যন্ত্রটি ছড়িয়ে দিয়ে সাথে সাথে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাহলে তা এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকের মাঝে একটি অভূতপূর্ব সারা ফেলবে।