মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে অবনতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। ভারি বৃষ্টিপাত নিচ্ছে বন্যার রূপ। অথৈই পানিতে ডুবে গেছে বিভিন্ন দেশের অঞ্চলগুলো। আকস্মিক বন্যায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। অসহায় মানুষগুলো ঠাঁই না পেয়ে থাকছে আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেকে আবার নিজেদের সহায় সম্বল হারিয়ে হয়ে পড়েছে নিঃস্ব।
এছাড়াও রাস্তাঘাট, বৈদ্যুতিক খুঁটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চলতি সপ্তাহে চীন, মেক্সিকো, থাইল্যান্ডসহ আফ্রিকার দেশ নাইজার ও সুদানেও দেখা দিয়েছে বন্যা।
দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বিভিন্ন দেশে বন্যায় চরম দুর্ভোগে দিন পার করছে সাধারণ মানুষ। চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লিয়াওনিংয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারি বর্ষণে ১১ জন নিহত এবং আরও ১৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী সিসিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২৩ আগস্ট সন্ধ্যায়, লিয়াওনিং প্রদেশের হুলুদাও শহরে বন্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্যোগ ত্রাণ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।’ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, ‘এই রাউন্ডের ভারি বৃষ্টিপাত হুলুদাও শহরের, বিশেষ করে জিয়ানচাং কাউন্টি এবং সুইজং কাউন্টির অত্যন্ত মারাত্মক ক্ষতি করেছে। রাস্তা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, ঘরবাড়ি, ফসল ইত্যাদি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য সর্বাত্মক অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টা চলছে।’ ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে হুলুদাওতে ৫০ হাজারেও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভারি বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ সুদানও। দেশটির আনুমানিক ৩ লাখ ১৭ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এতে বলা হয়েছে, বন্যায় দেশটির আনুমানিক ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত রয়েছে। ওসিএইচএ অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর দারফুর, পশ্চিম দারফুর, নীল নদী এবং উত্তর দারফুর। ভারি বর্ষণ ও বন্যার কারণে বাঁধ ধসে অন্তত ৬০ জন নিহত এবং ১১২ জন আহত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলেও জানা গেছে।
এছাড়াও জানা গেছে, বন্যা-পরবর্তীতে দেশটিতে রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। সম্প্রতি সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাসালা, গেদারেফ, আজ জাজিরাহ এবং খার্তুম রাজ্য জুড়ে ২৭ জনের মৃত্যুর সঙ্গে ৫৫৬টি কলেরা কেস নিশ্চিত করেছে।
এ বছর জুনে বৃষ্টিতে কাসালা শহরে জমায়েত হওয়ার জায়গাগুলোতে প্রায় ৯৫০ লোকের থাকার জন্য ১৯০টি তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও কাসালা শহরে ৩৩টি স্কুল, রেফি ঘরব কাসালা, হালফা আজ জাদেদাহ এবং রেফি অ্যারোমা এলাকার ২৩ হাজারেরও বেশি শিশু শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বন্যায় ফসলও ধ্বংস হচ্ছে। কৃষিকাজ, পশুপালন এবং দৈনিক মজুরি সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ নাইজারেও। দেশটির রাজধানী নিয়ামি জুন মাস থেকে সাহেল অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের পর বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে দেশের বাকি অংশ থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশটির প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শহরের বাইরের প্রধান রুটগুলো বেশির ভাগই পানির নিচে রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ১১ হাজার ৫০০ বাসিন্দা এ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ পরিবহণ সংস্থা নাইজারের বাকি অংশে তাদের রুটগুলো স্থগিত করেছে। শহরের প্রান্তে কাদা দেখে ট্রাকচালক আলি আদমাউ এএফপিকে বলেছেন, তার ট্রাকটি আরও চারজনসহ পানিতে তলিয়ে গেছে। আরেকটু হলেই ডুবে যেতেন তারা।
ভারি বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে থাইল্যান্ডেও। দেশটিতে সম্প্রতি বন্যায় ২২ জন মারা গেছে। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটির দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ১০ দিনে ১৩টি প্রদেশে আরও ১৯ জন আহত হয়েছেন। পাশাপাশি ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যের উত্তর ও উত্তর-পূর্বের ৩১টি প্রদেশ সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যার সম্মুখীন হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে বিভাগটি। এছাড়াও ভারি বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের মতো ঘটনাও বেড়েছে। ফলে ভূমিধসেও ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের ফুকেট দ্বীপে ভূমিধসে নিহতদের মধ্যে এক রুশ দম্পতি ও মিয়ানমার থেকে আসা ৯ জন অভিবাসী কর্মী রয়েছেন। গত সপ্তাহে দেশটির ১২টি প্রদেশে প্রবল বৃষ্টির কারণে এ দুর্যোগের ঘটনা ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী পেতাংটার্ন সিনাওয়াত্রা উত্তরাঞ্চলীয় নান এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে গিয়ে খাবার সরবরাহ করেছেন। এদিকে, থাই-চীন রেলওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের একটি সুড়ঙ্গ ধসে পড়ায় তিনজন কর্মী আটকা পড়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা তাদের বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে পরিবহণ মন্ত্রণালয়।