লুটপাটের সহযোগী রউফ

প্রচলিত নীতিমালা শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদত্যাগী গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় লুটপাটের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। নীতিমালাগুলো এমনভাবে শিথিল করা হয়েছিল যাতে লুটপাটকারীরা বিশেষ সুযোগ পান। লুটপাটের কারণে দুর্বল হওয়া ব্যাংকগুলোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে বেপরোয়াভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে। ডলার না পেয়েও জোগান দেওয়া হয়েছে ছাপানো টাকার। লাগামহীনভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়ায় বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। নিজে উদ্যোগী হয়ে একটি ব্যাংককে দখলদারের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া সুদের হার এবং ডলারের দাম নির্ধারণে ঘনঘন নীতির বদল করে অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিলেন। অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও ব্যাংক খাতের অভিভাবকের এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক হয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, ব্যাংক লুটেরাদের প্রতি গভর্নরের নৈতিক, পলিসিগত ও প্রত্যক্ষ সমর্থন এ খাতে বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত গভর্নর দায়িত্ব পালন করেছেন, দুজন ছাড়া প্রত্যেকেই পুরো মেয়াদ সম্পন্ন করেছেন। আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরির ঘটনা গোপন রাখার দায়ে তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। আর আব্দুর রউফ তালুকদার হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেননি। আড়ালে থেকেই পদত্যাগ করেছেন। তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসার সাহস পাননি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেছেন, আব্দুর রউফ তালুকদারকে গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আব্দুর রউফ গভর্নর হয়ে বড় বড় ঋণখেলাপিকে নানাভাবে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে পর্দার আড়ালে থেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এখন জানা যাচ্ছে, সাবেক এই গভর্নর এস আলম গ্রুপকে নানাভাবে নীতিবহির্ভূত সুবিধা দিয়ে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সেসব অর্থ বিদেশে পাচার করার ক্ষেত্রে গভর্নর ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ওই গভর্নর যে দেশ থেকে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন এতে কারও কোনো ধরনের সন্দেহ থাকার উচিত নয়।

জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। তার দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৬ দিনের মধ্যে ১৮ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে খেলাপি ঋণ নবায়নের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে পুনঃতফশিলের পাশাপাশি ডাউন পেমেন্টর হারও কমিয়ে দেওয়া হয়। আগে যেখানে সর্বনিু ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নেওয়া হতো। ওই নীতিমালায় আড়াই থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশে নেওয়ার বিধান করা হয়। বড় অঙ্কের খেলাপিদের ডাউন পেমেন্টের হার কমানো হয়।

এ নীতিমালার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অর্থনীতিবিদরা রীতিমতো হতবাক হন। যেখানে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর পক্ষে, সরকারও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়াতে চায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও অফিশিয়ালি প্রস্তাব গেছে সরকারের কাছে আইন সংশোধন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য; সেখানে গভর্নর নিজে উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে।

২০২২ সালের ১৮ জুলাই ওই সার্কুলার জারির আগে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা অনুমোদন করলেই তা পুনঃতফশিল হতো, এর আগে নয়। এতে ব্যাংক খাতে প্রভাবশালীদের খেলাপি ঋণ বেআইনিভাবে পুনঃতফশিল করার প্রক্রিয়াটি ঠেকানো যেত। বিধিসম্মত না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনঃতফশিলের প্রস্তাব বাতিল করে দিত। ফলে এ খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল।

কিন্তু ওই সার্কুলার জারির পর খেলাপি ঋণ পুনঃতফশিল করার ক্ষমতা চলে গেল বাণিজ্যিক ব্যাংকের পর্ষদের হাতে। তারাই এক্ষেত্রে সব কাজ করবে। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিষয়টি জানাবে। এমনকি সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো পূর্বানুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সূত্র জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপের খেলাপি ঋণ ‘অবাধে’ নবায়ন করতেই ওই নীতিমালা জারি করা হয়। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ নবায়নের বিষয়টিও গোপনে থেকে যেত। কারণ, ব্যাংকের পর্ষদ থেকে এসব তথ্য বের হতো না।

জানা যায়, গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সরকারের প্রভাবশালী কতিপয় ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে এ ধরনের নীতিমালা করতে বলা হয়েছিল। গভর্নর এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে ওই নীতিমালা জারি করে দিয়েছেন। ফলে কিছু লুটেরা ওই নীতিমালার সুযোগ নিয়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক খাত।

ওই নীতিমালা জারির ১৫ দিনের মধ্যে আবার সংশোধন করে আরও শিথিল করা হয়। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট জারি করা অপর এক সার্কুলারের মাধ্যমে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। আগে এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচারবিশ্লেষণ করত। আগে খেলাপি ঋণ তিন দফা নবায়ন করা যেত। ওই সার্কুলারের মাধ্যমে চার দফা নবায়ন করার বিধান করা হয়। কিন্তু এ বিধান পালিত হয়নি। ওই নীতিমালা ভঙ্গ করে বেক্সিমকো গ্রুপের একটি ঋণ অগ্রণী ব্যাংক ১৭ দফা নবায়ন করেছে।

প্রচলিত নিয়মে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফ করতে পারে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে বেশি সুদ মওকুফ করতে পারবে না। তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সমান আয় রেখে বাকি সুদ মওকুফ করতে পারবে। কিন্তু ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে তহবিল ব্যবস্থাপনার ব্যয়ের সমান অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ মওকুফ করতে পারবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের খরচের টাকা না তুলেই বাড়তি সুদ মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়। এতে ব্যাংকের আয় কমেছে, দুর্বল হয়েছে ব্যাংক। লাভবান হয়েছেন প্রভাবশালী গ্রাহক। এছাড়া ব্যাংকগুলোর দুর্বলতার মধ্যেও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বড় গ্রাহকদের একাধিকবার বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। এতেও ব্যাংক দুর্বল হয়েছে। একইভাবে লাভবান হয়েছেন প্রভাবশালী গ্রাহক।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি আওয়ামী লীগ আমলের ১৫ বছরই ছিল। কিন্তু পদত্যাগী গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে তা বেড়েছে বেপরোয়া গতিতে। তিনি যোগ দেওয়ার আগে ২০২২ সালের ৩০ জুন খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত ৩০ জুন পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ৬৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। জুলাই থেকে ৫ আগস্ট খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে।

আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে ব্যাংক খাতে ঋণের নামে এমনভাবে লুটপাটের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে ওই সময়ে বিতরণ করা ঋণের সিংহভাগই পাচার হয়ে গেছে, যা এখন খেলাপি হচ্ছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন খেলাপি ঋণ কমাবেন। কিন্তু পারেননি। খেলাপি কমাতে ঋণ অবলোপন করতে ব্যাংকগুলোকে চাপ দেন। অবলোপন করতে হলে আগে মামলা করতে হয়। ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ মামলা ছাড়াই অবলোপন করা যাবে। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি অপর এক সার্কুলারে বলা হয়, কোনো ঋণ দুই বছর মন্দ হিসাবে চিহ্নিত হলেই তা অবলোপন করা যাবে। আগে এ সময়সীমা ছিল তিন বছর। অবলোপনে এত ছাড় দিয়েও খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হয়নি। কারণ, ঋণ অবলোপন করতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলো অর্থের অভাবে প্রভিশন করতে পারেনি বলে অবলোপন করে খেলাপি ঋণও কমাতে সক্ষম হয়নি। এছাড়া নতুন নতুন ঋণ খেলাপি হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

খেলাপি ঋণ নবায়নে নজিরবিহীন ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগে ২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার খেলাপি নবায়ন করা হয়। কিন্তু ওই বছরেই নবায়ন করা ঋণ থেকে আবার ৪০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে যায়। ২০২৩ সালে ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। ওই বছরেই নবায়ন করা ঋণের ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। ফলে নবায়ন করেও খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হয়নি।

খেলাপি ঋণ কমাতে ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করে। এতে খেলাপি ঋণের হার ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এতে যথেষ্ট ফাঁক রাখা হয় প্রভাবশালীদের ছাড় দিতে। আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালকদের আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা ব্যাংক খাতে দুঃশাসনের মাত্রাকে আরও গভীরে নিয়ে গেছে। এতে কিছু পরিচালক বেপরোয়া হয়ে ব্যাংক লুটপাট শুরু করেন। যে কারণে ব্যাংক খাত এখন প্রবল তারল্য সংকটে ভুগছে।

সুদের হার নিরূপণের ক্ষেত্রেও বিদায়ি গভর্নর পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খল করে গেছেন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে স্মার্ট রেট চালু করা হয়। এতে সুদের হার মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের ৮ মে স্মার্ট রেট প্রত্যাহার করে বাজারভিত্তিক ঋণের সুদহার চালু করা হয়। এখনো বাড়তি সুদ অব্যাহত রয়েছে। একই অবস্থা করে যান ডলারের বাজারে। ডলারের দাম নিরূপণে একেক সময় একেক ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বাজারকে অস্থির করে তোলেন। আগের নিরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার পর ৮ মে চালু করা হয় ডলারের দামে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে এখন ডলারের দাম বেড়ে স্থিতিশীলতা এসেছে।

গত ৫ মে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তৎকালীন গভর্নরের ইচ্ছায় ব্যাংকটি ওই গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কারণ, ব্যাংকটি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাচ্ছিল না।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়ে সরকারকে নজিরবিহীনভাবে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। ৩১ জুলাই এর স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ছাপানো টাকায় ঋণ দেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েই চলেছে।

সাবেক গভর্নরের বিরুদ্ধে এখন ব্যাংক দখল ও লুটপাট করায় সহযোগিতার দায়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে সরকারি খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের সাবেক এমডি এসএম ফরমানুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করার দায়ে তিনি মামলাটি করেছেন। বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রকল্পে বেআইনিভাবে মোটা অঙ্কের ঋণ না দেওয়ার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। মামলাটি এখন পুলিশ তদন্ত করছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিটি শাখার নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। সীমার বেশি কোনো শাখা থেকে ঋণ বিতরণের সুযোগ নেই। কিন্তু জনতা ব্যাংকে স্থানীয় কার্যালয় থেকে বেক্সিমকো গ্রুপকে বেপরোয়া ঋণ দিতে ঋণ সীমা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ফলে একটি শাখা থেকেই বেক্সিমকো গ্রুপ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের নজিরবিহীন ঘটনা। এ ঘটনা জানার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একেবারেই চুপ ছিল।