ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের অভিযোগ তদন্ত করবে ফিফা

গত মে মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ফিফা কংগ্রেসে ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) ও যেকোনো প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের দাবি জানায় ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ)। একইসঙ্গে ইসরায়লের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগও তুলে তারা।

ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি ফিফা। তবে বৈষম্যবিরোধী নীতি ভাঙার অভিযোগের তদন্ত করবে ফুটবলের সর্বোচ সংস্থা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলায় চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এর প্রায় সাত মাস পর ফুটবলে তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানায় পিএফএ। গত ২০ জুলাইয়ের আগে রুলিং কাউন্সিলের একটি বিশেষ সভা ডাকার কথা ভেবেছিল ফিফা। যেখানে স্বাধীনভাবে করা আইনি বিশ্লেষণ পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটা নির্ধারণ করার কথা ছিল।

তবে প্রতিবেদন শেষ করার জন্য আইনি বিশেষজ্ঞদের আরও সময় দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার জুরিখে প্রধান কার্যালয়ে আইনি বিশ্লেষণটি গ্রহণ করে ফিফা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিএফএ’র আনা বৈষম্যবিরোধী নীতি ভাঙার অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব শৃঙ্খলা কমিটিকে দিয়েছে তারা। এছাড়া ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ফুটবল দলগুলোর ইসরায়েলি প্রতিযোগিতায় খেলার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ফিফাকে পরামর্শ দেবে গভর্নেন্স, অডিট ও কমপ্লায়েন্স কমিটি।

যদিও ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের জন্য ভোটাভুটির প্রস্তাব উত্থাপন করতে অনীহা জানান ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল এই ব্যাপারে ফিফা কাউন্সিল যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেছে এবং বিস্তারিত মুল্যায়নের ভিত্তিতে আমরা স্বাধীন আইনি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে কাজ করছি। সেখানে চলমান সহিংসতা দাবি করে যে, সবকিছুর আগে আমাদের প্রয়োজন শান্তি। ’

‘যা ঘটছে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাই, জরুরি ভিত্তিতে সেই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার। ’

ব্যাংককে ফিফা কংগ্রেসে ইসরায়েলের ওপর অভিযোগ তুলে পিএফএ প্রধান জিব্রিল রাজুব বলেন, ‘এই সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে ফিফা উদাসীন থাকতে পারে না। ’ ফিফার কাছে অবিলম্বে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের দাবি জানান তিনি।

আইএফএ প্রধান শিনো মোশে জুয়ারেস তা নাকচ করে বলেন, ‘এই অভিযোগ কৃত্রিম, রাজনৈতিক ও শত্রুভাবাপন্ন। আইএফএ ফিফার কোনো নিয়মভঙ্গ করেনি। পিএফএর প্রস্তাবের সঙ্গে আইএফএ ও এর কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। ’ তার মতে, খেলাধুলার বাইরে গিয়ে ইসরায়েলি ফুটবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইসায়েলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ফিফার রায় স্থগিত হওয়ার প্রতিক্রিয়া পিএফএ প্রধান বলেন, ‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, অভিযোগের ভিত্তিতে সর্বসম্মতি ক্রমে ফিফা কাউন্সিল তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা নজর রাখব এই ব্যাপারে ও নিজেদের অধিকার রক্ষায় অটল থাকব।

১১ মাস ধরে গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০৫ জন লোক মারা গেছেন। যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক ছিলেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় অন্তত ৪১ হাজার ৭৮৮ জন লোক মারা গেছেন, যার বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক।

জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দল বৃহস্পতিবার জানায়, অন্তত আটটি ক্লাব দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত ইসরায়েলি বসতিতে গড়ে উঠেছে বা সেখানে খেলে থাকে। এছাড়া আরেকটি ক্লাব তাদের কয়েকটি হোম ম্যাচ খেলেছে সেই বসতিতে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন যে এসব দলের কার্যক্রম থেকে বোঝা যায় যে, আইএফএ (ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলের অবৈধ উপস্থিতিকে সমর্থন করছে, যা তারা দখল করে রেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এটা স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ’এমন বৈষম্যমূলক আচরণ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ফিফাকে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এছাড়া ফিফা কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত যেন আন্তর্জাতিক আইনের মূল নীতির বাইরে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন। ’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা স্বাধীন ব্যক্তি, যাদের মানবাধিকার পরিষদ নিয়োগ করেছে। তাই তারা জাতিসংঘের হয়ে কথা বলেন না।