সরকারি অব্যবহৃত জমি জ্বালানি খাতে ব্যবহার করা হবে: উপদেষ্টা

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকার রেল, সড়কসহ বিভিন্ন খাতের অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করবে। এ জন্য শিগগিরই একটি নীতি করা হবে, বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) পল্টনে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে অভ্যন্তরীণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংকগুলো ব্যালেন্স শিট নির্ভর অর্থায়নে মগ্ন। এই ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় লাঞ্চ বা ডিনারে বসে। বেক্সিমকো ও এস আলম এখন বেতন দিতে পারছে না, অথচ ব্যালেন্স শিট দেখে এসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক, সম্পদ দেখা হয়নি। এখন এই প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্স শিট যাচাই করে দেখা যাচ্ছে সবই ফাঁকা।

তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। এই খাতে ব্যাংকের ঋণ দিতে আগ্রহ নেই বললেই চলে। তাই নতুন নীতিতে এই খাতে অর্থায়নের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সোলার স্থাপনের জায়গা ও সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা সরকার করে দেবে।

সরকার সব বিদ্যুৎ কিনবে এমন ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসব উল্লেখ করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, মার্চেন্ট বিদ্যুৎ নীতি গ্রহণ করা হবে। বিনিয়োগকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন এবং তারাই বিক্রির জন্য গ্রাহক ঠিক করবেন। কারণ সরকার স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) থেকে সরে আসতে চায়।

সরকার ১০ থেকে ২০ শতাংশ আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। কারণ আইপিপির ক্রেতা সরকার হওয়ায় এখন টাকা দিতে পারছে না। এই নীতি থেকে সরে আসবে সরকার, বলেন জ্বালানি উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উদ্যোক্তাদের মতো সাধারণ উদ্যোক্তারা এ ধরনের লাঞ্চ বা ডিনারে যেতে পারেন না। ফলে তাদের জন্য ঋণ পাওয়া সহজ হয় না। ব্যাংকগুলোকে সম্পদ বিবেচনা করে ঋণ অনুমোদন করার পরামর্শ দেন জ্বালানি উপদেষ্টা।

ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটুক, এটি আগের সরকার আন্তরিকভাবে চায়নি। দেশে এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে যেতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি ছাড়া দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য সোলার স্থাপন করা যাবে না, আমাদের জায়গা নেই এমনটা বলা হতো। এটি ভ্রান্ত ধারণা উল্লেখ করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আগের সরকারের আমলে জোর করে মানুষের জমি নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এটা বন্ধ করতে চাচ্ছি। অব্যবহৃত জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ইক্যুইপমেন্ট আমদানি শুল্ক কমানো হবে না। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তোলার জন্য সরকার এ খাতে শুল্ক রাখবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় বাধা প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব বলে জানান ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ইকোনমিক জোন নির্মাণের নামে সাধারণ মানুষের অনেক জমি অধিগ্রহণ করলেও সেখানে কিছুই করা হয়নি। এতে সৃষ্টি হয়নি কর্মসংস্থানও।

এ ছাড়া অর্থায়ন সংকট ও কারিগরি প্রযুক্তির অভাবও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমস্যা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকৃত সমস্যা কোথায়, সেটি চিহ্নিত করা দরকার।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্র প্রতিযোগিতার অভাব। এজন্য আমরা সব উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন আর সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য মন্ত্রী, সচিবদের আত্মীয় হওয়া লাগবে না, চেনা লাগবে না।

অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অর্থায়ন সহজ করতে হবে বিশ্বব্যাপী ১৮ ধরনের ঋণ ইনস্ট্রুমেন্ট অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশে শুধু নন কনসেশনাল ঋণ দেওয়া হয়। ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট বাড়াতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আসার পথ সুগম করতে হবে।

ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দ্য সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার মো. আশানুর রহমান, ক্লিন-এর চিফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের চেয়ারপার্সন গৌরাঙ্গ নন্দী।