নিয়োগ থাকলেও ঝিনাইদহের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান না অধিকাংশ চিকিৎসক

নিয়োগ নেই বেশিরভাগ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। যেখানে আছে সেখানেও যান না চিকিৎসকরা। কাগজে-কলমে বছরের পর পর পদায়ন থাকলেও চেনেন না ওই এলাকার মানুষ। এভাবেই চলছে ঝিনাইদহের ১৩ টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। যে কারণে সেবা পাচ্ছে না প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো। গ্রাম থেকে সেবা নিতে ছুটতে হয় উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্য মতে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা বাদে বাকি ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৩ টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১৫’শ থেকে ২ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। কিন্তু উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পদায়ন থাকলেও সেখানে যান না চিকিৎসক। সহকারী মেডিকেল অফিসারের পদায়ন থাকলেও নানা অজুহাতে সেখানে যান না অনেকে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে একজন অফিস সহায়ক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। সেখানে দেখা মেলেনি সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারেরও। ঠান্ডা জ্বরের ওষুধ দিচ্ছেন অফিস সহায়ক। অনেক রোগীকে ফেরত যেতে দেখা গেছে।
সন্তানেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রজিনা বেগম নামের এক নারী জানান, আমি মাঝে মাঝে আমার সন্তানকে নিয়ে আবাইপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসি কিন্তু এসে দেখি এখানে কোন ডাক্তার নেই। তাই হতাশা নিয়ে আবার বাড়িতে ফিরে যাই। আমার সন্তানকে শৈলকুপা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাবো সেখানে যেতে হলে গাড়ি ভাড়া লাগবে অনেক তাই আর যাওয়া হয়না।
অপরদিকে চিকিৎসকসহ জনবল পদায়ন না হওয়ায় দেড়যুগের বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে গেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। খুলে পড়ছে ইট ও পলেস্তারা। চুরি হয়ে গেছে জানালা-দরজা। পরিণত হয়েছে জঙ্গল আর গোয়ালে। অথচ সরকারি খাতাই এখনও চালু এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।
মান্দারবাড়িয়া গ্রামের রাসেল হোসেন জানান, মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নি¤œান হলেল এলাকাবাসী কোন দিনও সেবা পাননি এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। তাই এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করলে এলাকার অসহায় মানুষগুলো চিকিৎসা সেবা নিতে পারতো। আমি দ্রুত এই স্বাস্থ কেন্দ্রটি সংস্কার করে চালুর দাবী জানাচ্ছি।
একইভাবে সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও কোন মেডিকেল অফিসার নেই। সেখানেও নামমাত্র চলছে চিকিৎসা সেবা।
সেবা নিতে আসা নাজমা খাতুন নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমরা এর আগে এখানে একজন বড় ডাক্তার দেখেছি। তিনি মাঝে মাঝে এসে আমাদের সেবা দিতেন। অনেক বছর হয়ে গেলো তিনি চলে গেছেন এরপর আর কাউকে তো দেখি না।
রাশেদ নামের এক রোগী বলেন, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসলে শুধু জ্বর আর ঠান্ডার ওষুধ পাই। এতবড় হাসপাতাল করছে সরকার। শুনেছি নাকি এখানে বড় ডাক্তারের নিয়োগও আছে কিন্তু তাতে তো পাই না। আমরা চাই এখানে একজন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেওয়া হোক যিনি প্রতিনিয়ত আমাদের সেবা দিবেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের জেলায় চিকিৎসক সংকট আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তারাও আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন জেলায় চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করি চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।