যশোর কাস্টমর্সের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের হয়রাণি অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক ভ্যাট ও ট্যাস্ক আদায়ে মাঠে নেমেছে সরকারি এই সংস্থাটি। কাস্টমর্সের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে ভ্যাট বাড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। কাস্টমর্সের কর্মকর্তাদের ভয়ে ব্যবসায়ীরা কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায় বাড়াতে গত ৯ জানুয়ারি সরকার বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগেই মাঠে নেমেছে যশোরের কাস্টমর্সের কর্মকর্তারা। তারা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে করের আওয়তা ও বেশি করে ভ্যাট দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন। এতে করে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভ্যাট বেড়ে গেলে ব্যাবসার ওপর এর প্রভাব পড়বে। শুধু তাই নয়, এ চাপ জনগণের ওপর বর্তাবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন কর বৃদ্ধির প্রভাব ইতোমধ্যে খাদ্য, পানীয়, মোবাইল সেবা এবং রেস্তোরাঁসহ অতি প্রয়োজনীয় বা কম অপ্রয়োজনীয় উভয় ধরনের পণ্য-সেবায় পড়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ বলে অভিহিত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে যশোর বিসিকের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, রাজস্ব আদায় বাড়াতে পরোক্ষ করের ওপর সরকারের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন করে তুলবে। সমালোচনার মুখে সরকার কিছু খাতে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। যার মধ্যে আইসিটি খাত উল্লেখযোগ্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মোবাইল সেবা, রেস্তোরাঁ, ওষুধসহ কয়েকটি পণ্য ও সেবার ওপরও শুল্ক-কর কমিয়েছে। কিছু পণ্যে শুল্ক-কর কমানোর সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ স্বাগত জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেছে, সাবান ও টিস্যু পেপারের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য এখনও অতিরিক্ত করের আওতায় রয়েছে। যা সাধারণ পরিবারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অন্তবর্তী সরকারও ধনী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ কর আদায় জোরদার করার বদলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আরও বেশি করে পরোক্ষ কর আদায়ের পথে হাঁটছে। ভ্যাট বৃদ্ধি সেই ধরনের একটি পদক্ষেপ। ভ্যাট বৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক তা বিবেচনা করা হয়নি। ভ্যাট বাড়ানো হলে তা সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্দশা আরও বৃদ্ধি করবে। শুল্ক ছাড়ের সুবিধা কতটা সাধারণ মানুষ পেয়েছে, আর কতটা ব্যবসায়ীদের পকেটে ঢুকেছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অর্থনীতির শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, ভ্যাট বৃদ্ধি করাই একমাত্র পদ্ধতি নয়, ভ্যাট ও শুল্কের মতো পরোক্ষ করের বদলে প্রত্যক্ষ আয়কর বৃদ্ধি করাই জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করের বদলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পরোক্ষ কর আদায়ের ওপর বেশি নির্ভর করা হলে তা ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধি করে।
তিনি বলেন, কর ফাঁকি রোধে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে রাজস্ব আদায় (কাস্টমস) কর্মকর্তাদের দুর্নীতির রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই হয়তো কাস্টমস কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। অথচ এখন রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিগত ফ্যাস্টি আওয়ামী সরকারের আমলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তবর্তী সরকারের দিক থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না, যা এই বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করে। কাজেই সরকারকে ভ্যাটের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ‘সহজ রাস্তা’ থেকে সরে আসতে হবে। ভ্যাট ও শুল্কের মতো পরোক্ষ করের বদলে ধনিক গোষ্ঠীর আয় ও সম্পদ থেকে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে।
যশোর কাস্টমর্সের সহকারী কমিশনার উম্মুল ওয়ারা ০১৩১৮-২৫৩৮৩৯ নম্বারে কয়েকবার ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেছেন, ভ্যাট-এসডি বাড়ার ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে। যা বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও তীব্রতর করবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছি, কাস্টমস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তারা ভ্যাট বাড়ানোর জন্য। আমরা কাস্টমসকে এ বিষয়ে পত্র দিয়েছি। তাদের সাথে বসে বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, চেম্বার কাস্টমর্স ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করে।