কমলা, মাল্টা ও কুল চাষ করে ভাগ্য বদল মনিরুলের

বিদেশ থেকে বাড়িতে ফিরে এসে বিদেশী জাতের কমলা, মাল্টা ও কুল চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন মনিরুল ইসলাম নামের এক তরুণ যুবক। এসকল ফলের চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন হরিণাকুন্ডু উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম। নিজের স্বপ্ন পুরনের আশায় বিদেশ থেকে বাসায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য না করে শুরু করেন কৃষি কাজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় তার নিজের চার বিঘা জমিতে রোপন করেন বিদেশি জাতের মাল্টা, কমলা, বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, থাই ও আপেল কুলের মিশ্র ফলের বাগান। কুল চাষ করেই এখন বদলে গেছে মনিরুলের জীবন। তার পুরো বাগান জুড়ে এখন লাল-সবুজের সমারহ।

ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার শিতলী গ্রামের মো. মনিরুল ইসলামের সফলতায় অন্য কৃষকরাও ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি জাতের এই কুল চাষের উপযোগী হওয়ায় সাফল্য পেয়েছেন মনিরুল ইসলাম । মনিরুলের মতন উপজেলার অনেক চাষি এখন ড্রাগন, মাল্টা, কমলাসহ, কুল চাষ করে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন। আগামীতে এই অঞ্চলে কুল চাষসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমী ফলের চাষ বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মনিরুল ইসলাম প্রায় চার বিঘা জমির ওপর কুল বাগান, এক বিঘা মাল্টা, এক বিঘা কমলাসহ বেল, ড্রাগন, লিচু, আম, জাম, কাঠালের চাষ করেছেন।
হরিণাকুন্ডু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে হরিণাকুন্ডুর বিভিন্ন এলাকায় উচ্চফলনশীল বিদেশি জাতের কুল চাষ হচ্ছে। বাজারে বল সুন্দরী, আপেল কুল, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ছোট বড় অনেক বাগান হয়েছে এখানে।

শায়না এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধীকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালো লাগা ভালো বাসা ছিল। তাই লেখাপড়া কমবেশি করে বিদেশে পাড়ি জমায় মোটা অংকের টাকা আয়ের জন্য। আর টাকা আয়ও করেছি সেই টাকা দিয়েই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি তাই আজ হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা। আর মেয়েটা কলেজে পড়াশোনা করছে। আমার ছোট বেলা থেকেই একটা স্বপ্ন ছিল কৃষি নিয়ে কিছু একটা করার। চিন্তাভাবনা করে এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয় এবং পরামর্শ নিয়ে বিদেশী জাতের মাল্টা, কমলাসহ কুল বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়। পরে হরিণাকন্ডুু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের জমিতে বিভিন্ন জাতের ফল চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করি।

তিনি আরও বলেন, বাড়ির আঙ্গিনায় বাগান হওয়ায় চারা রোপণ করার পর আমি আর আমার স্ত্রী বাগানের পরিচর্যা করতাম। রোপনের ৯ মাসের মাথায় সব গাছে ভালো ফলন এসেছে। গতবছরের ডিসেম্বর থেকে বিক্রি শুরু করি। যা এখনও করে খুব অল্প সময়ে ভালো লাভজনক ফল বিদেশী কুল। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি ফল পাব। প্রতি কেজি কুল এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তিনি আরও বলেন, আশা করছি আমি আমার বাগান থেকে এই বছর কমলা, মাল্টা, কুলসহ অন্যান্য ফল বিক্রি করে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা আয় করবো।
এছাড়াও তিনি আশা প্রকাশ করেন ফলের চারা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চাষিরা প্রতারিত হন। এজন্য তিনি এলাকার যুবক কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য শায়ান এগ্রো ফার্মা প্রতিষ্ঠা করছেন এর মাধ্যমে কমলা, মাল্টা, বিদেশী বিভিন্ন জাতের কুলের চারা বিক্রয় করবেন যাতে যুবক কৃষি উদ্যোক্তারা আর প্রতারিত না হয়।
ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান জানান, আমার কাছে ফলের বাগান করার কথা বললে আমি তাকে বাগান করার পরামর্শ দিয়।
উপ-সহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মনিসংকর বিশ্বাস জানান, আমরা পরামর্শ নিয় বিদেশী জাতের মাল্টা, কমলা, কুলসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করার। আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তিনি বাগান করে আজ সকলের নজর কেরেছেন তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা।
এব্যাপারে হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন, এধরণের কৃষি উদ্যোক্তাকে আমরা সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকি। এছাড়াও নতুন উদ্যোক্তাদেরকে আমরা কৃষি অফিস থেকে সকল ধরণের সহযোগীতা কওে থাকি। বিদেশ ফেরত মনিরুল ইসলাম নামের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানায়।