চাকরি দেয়ার প্রলোভনে ৪ লাখ টাকা আত্বসাত করেছেন বাগেরহাট সদর খাদ্য গুদামের ইনচার্জ : লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন

বাগেরহাট সদর খাদ্য গুদামের আলোচিত ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার নামে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে । এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এদিকে পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট সদর খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি আবু বকর সিদ্দিক ২০২০ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়া খাদ্য গুদামে ওসি এলএসডি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন । ওই সময় তিনি কলারোয়ার পাঁচনল গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলেকে চাকরি দেয়ার নামে চার লাখ টাকা নেন। আব্দুল মান্নান মুকুল মেসার্স সবুজ রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী । সরকারের কাছে চাল বিক্রির সুবাদেই তৎকালীন কলারোয়া খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি আবু বকর সিদ্দিকের সাথে আব্দুল মান্নান মুকুলের পরিচয় হয়। তখন খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আব্দুল মান্নান মুকুলের ছেলে মহসিন হোসেন উত্তীর্ণ হয়। ওই পদে চুড়ান্ত চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোট ১৩ লাখ টাকা চুক্তির বিনিময়ে আবু বকর সিদ্দিক অগ্রিম ৪ লাখ টাকা নেন। এর মধ্যে দুই লাখ টাকা ব্যাংকে এবং দুই লাখ টাকা নগদ আবু বকর সিদ্দিককে দেন আব্দুল মান্নান মুকুল। কিন্তু চুড়ান্ত নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে আব্দুল মান্নান মুকুলের ছেলে উত্তীর্ণ হতে পারেননি ।

এর পর টাকা ফেরত চাইলে আবু বকর সিদ্দিক নানা তালবাহানা করেন। বিভিন্ন সময় আব্দুল মান্নান খাদ্য অধিদপ্তরের উদ্ধতর্ন কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেও টাকা ফেরত দেননি আবু বকর সিদ্দিক । বছরের পর বছর সময়ক্ষেপন করেছেন । ফলে পাওনা টাকা ফেরত ও আবু বকর সিদ্দিকের শাস্তির দাবিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আব্দুল মান্নান মুকুল । এ ব্যাপারে আব্দুল মান্নান মুকুল বলেন, ছেলেকে সরকারি চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে আবু বকর সিদ্দিক তার কাছ থেকে টাকা নেন। চাকরি না হলেও ওই টাকা ফেরত দেইনি। টাকা ফেরত পেতে খাদ্য অফিসের বিভিন্ন অফিসারের কাছে গেলেও কোন সুরাহা হয়নি । এ ব্যাপারে কলারোয়া মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, তার কাছে একাধিকবার ওই চাকরির টাকা ফেরত দেয়ার ওয়াদা করেছে আবু বকর সিদ্দিক । কিন্তু ফেরত দেননি । নিজের সব কিছু বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে বর্তমান পথে বসার উপক্রম হয়েছে মিলার আব্দুল মান্নান মুকুলের। অথচ এ ব্যাপারে স্থানীয় খাদ্য প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেননি।

সুত্র বলছে, বহু অপকর্ম ও একাধিক নারীকেলেংকারী হোতা বাগেরহাট সদর খাদ্য গুদামের বহুল আলোচিত ওসিএলএসডি আবু বকর সিদ্দিককে নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তাকে রক্ষা করতে নানামুখী অপতৎপরতা চলছে । তার দুনীর্তি ও অনিয়ম ধামাচাপা দিতে উদ্ধতর্ন কর্মকর্তার নির্দেশে বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পক্ষ থেকে নামে মাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । ওই সাফাই কমিটি দিয়ে তার অনিয়মগুলো জায়েজ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ।

এতে খুলনাঞ্চলের খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে ।
আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ফকিরহাটের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দীপঙ্কর মণ্ডল ও রামপালের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুজিৎ কুমার মুখার্জী এবং মোল্লারহাট খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডিকে রাখা হয়েছে । মোল্লারহাট সি ক্যাটাগরির খাদ্য গুদাম । আর বাগেরহাট সদর হচ্ছে এ ক্যাটাগরির গুদাম । মোল্লারহাট খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি শামীম হচ্ছে আবু বকর সিদ্দিকির ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

এছাড়া সদর খাদ্য গুদামের ইনচার্জ জেলার সমস্ত খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডিদের লিড দেন। সেখানে প্রথম শ্রেণীর খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডির দুনীর্তি ও অনিয়ম তদন্তে তৃতীয় শ্রেণীর ওসিএলএসডিকে দায়িত্ব দেয়ায় নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে । এটাকে হাস্যকর তদন্ত কমিটি বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন খাদ্য কর্মকর্তা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা বলেন, লোক দেখানোর নামেই ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । একই পদধারী সি গ্রেডের গুদামের ইনচার্জকে দিয়ে প্রথম গ্রেডের গুদাম ইনচার্জের দুনীর্তির তদন্ত এটাই সম্ভবত খাদ্য অধিদপ্তরে প্রথম নিদর্শন হতে চলেছে । সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে তদন্ত কমিটিতে নিজের নাম কথা স্বীকার করেছেন মোল্লার খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি শামীম ।

একই জেলার তৃতীয় শ্রেনীর গুদাম ইনচার্জকে দিয়ে প্রথম শ্রেনীর গুদাম ইনচার্জের দুনীর্তি তদন্ত কতটা যৌক্তক ? এমন প্রশ্নের কোন সুদুত্তর দিতে পারেননি বাগেরহাট জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাকিল আহমেদ। জনবল স্বল্পতার কারণে ওই তদন্তের দায়িত্বে একজন ওসিএলএসডিকে রাখা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন । এদিকে দুনীর্তি ও অনিয়ম এবং একাধিক নারীকেলেংকারীর হোতা আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবী জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।#