মাসদার হোসেন মামলায় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির গেজেট গ্রহণে ২০১৮ সালের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
রোববার (২৯ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
শিশির মনির বলেন, প্রথমত ২০১৮ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির গেজেট গ্রহণ করে যে আদেশ দিয়েছিলেন সেটি স্থগিত করা হয়েছে। এখন ওই আদেশের আর কোনো কার্যকারিতা থাকলো না। দ্বিতীয়ত শৃঙ্খলাবিধি বর্তমানে যা আছে তা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে। তৃতীয়ত হাইকোর্ট বিভাগে ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে (বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় সংক্রান্ত) রিট আবেদনের যে শুনানি হচ্ছে, তার আর কোনো বাধা থাকলো না।
তিনি আরও বলেন, শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে হাইকোর্টে শুনানির সময় একটা প্রশ্ন উঠেছিল, আপিল বিভাগের একটা আদেশ থাকা অবস্থায় হাইকোর্টে এটার শুনানি করা যাবে কিনা। ফলে আজকের আদেশের মাধ্যমে সেই বাধাটা দূরীভূত হলো।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
পরে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়। পরের বছর ৩ জানুয়ারি সে গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। এই আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরসহ আট আইনজীবী গত মাসে আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করেন।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি শেষে রোববার আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন।
ওইদিন আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালে এমন একটি কাজ করেছে, যেখানে নিম্ন আদালতের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে কঠিন করে দেওয়া হয়েছে। একটি শৃঙ্খলাবিধি করা হয়েছে, যেটা ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ গ্রহণ করে একটি আদেশ দিয়েছিলেন। এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে আমাদের নিম্ন আদালতের জুডিসিয়াল অফিসারদের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলে। ওই আদেশকে রিভিউ চেয়ে আমরা আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের শুনানি হয়েছে।
তিনি বলেন, শুনানিতে আমরা বলেছি, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তখনকার দিনের বিচার বিভাগকে অ্যাসল্ট করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে বিদেশে পাঠিয়ে এই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে। যেখানে আগে নয়জন বিচারপতি ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। পরে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করে পাঁচজন বিচারপতির মাধ্যমে সেই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল। অথচ যেটি ছিল অধস্তন বিচারকদের জন্য সবচাইতে বেশি অন্যায় ও অমর্যাদাকর এবং স্বাধীনতার পথে বড় বাধা।
আমরা বলেছি, এটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তৎকালীন সরকার বাধ্য করেছিল এ আদেশ দিতে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাপারে শিশির মনির বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার ‘ব্রোকেন ড্রিম’ বইয়ে এ বিষয়ে লিখেছেন। একদিন দেখা গেল তিনি আদালতে ওঠেননি। বলা হয়েছিল তিনি অসুস্থ, বাড়িতে আছেন। সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতকে প্রশ্ন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি কোথায়, তখন সরকারের পক্ষে বলা হয়েছিল তিনি অসুস্থ। অথচ খবর নিয়ে জানা গেল তিনি অসুস্থ নন। তিনি নিজেও বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ নন। তারপরও তাকে এজলাসে আসতে দেওয়া হয়নি। তিনি বিদেশে গিয়েছেন। বিদেশ থেকে আর ফেরত আসতে পারেননি। সেখান থেকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করেছেন। তার বিদায়ের পর বিধিটি গ্রহণ করা হয়েছে।