বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কৃষকরা মিলিতভাবে পৗর এলাকার আউশিয়া গ্রামের সেতু থেকে দামুকদিয়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করেন। কারো মাথায় গামছা বাধা তো কারো কোমড়ে। কেউ হাতে নিয়েছেন কোদাল, কেউ কাচি। যে যার মত কাজ করে চলেছেন।
যেন দম ফেলার জো নেই। শত শত মানুষ জড়ো হয়ে করছেন স্বেচ্ছাশ্রমে সেচখাল পরিষ্কার। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত সেচখালটি ভরাট ও আগাছায় পরিপূর্ণ হলেও কর্মকর্তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। যেন চোখে কাঠের চশমা লাগিয়েছেন তারা। তাই স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কৃষকরা মিলিতভাবে এ কাজে অংশ নেয়। এসময় পৌর এলাকার আউশিয়া গ্রামের সেতু থেকে দামুকদিয়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করা হয়।
কৃষকরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে আছে এস নাইন কে সেচখালটি। যা ময়লা-আবর্জনা আর আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবাহ। ফলে খালটির ধার ঘেষে থাকা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে স্যালো মেশিনই ফরসা কৃষকদের। তাতে ফসল উৎপাদনে বাড়তি খরচ হতো কৃষকদের। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বারবার জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষা না করে নিজেরাই খাল পরিষ্কারের করেছেন এই কৃষকরা। খালটি পুন:খনন করে প্রতিবছর পর্যাপ্ত পানি দেওয়ার দাবি কৃষকদের।
দামুকদিয়া গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, ‘খালে সারাবছর পানি থাকলে ফসল উৎপাদনে টাকা খরচ করে সেচ নেওয়া লাগে না। তাতে উৎপাদন খরচ কমে।
শাওন হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কমকর্তাদের কাছে খাল পরিষ্কারের জন্য ধর্না দিলেও সাড়া দেয়নি তারা। তাই গ্রামের লোকজনদের নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে সেচখালের আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। যেকাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড করবে সেটা সাধারণ কৃষকদের করতে হচ্ছে।’
শরিফুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন,‘সেচ নিয়ে ফসল উৎপাদন করলে লাভের মুখ দেকা যায়না। তাই সেচখালটিতে সারাবছর পানি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
সেচখাল পরিষ্কারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। সেসময় ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বাদশা আলমগীর বলেন, খালের শেষ অংশ হওয়ায় পানি আসতে অনেকটা বেগ পেতে হয়। তার উপর কয়েকটা রেগুলেটরি ও টারশিয়ারী গেট আছে,যার কারণে পানি শেষ অংশে তেমন একটা আসতে পারে না। শ্রীঘ্রই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খালটি পুন:সংস্কার করা হবে এবং নতুন করে খাল তৈরি হবে। কৃষকদের ফসল উৎপাদনে সেচখরচ কমাতে সারাবছর খালটিতে পানি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
শুধু এবারই নয়, গত কয়েকবছর ধরেই এই এলাকার কৃষকরা নিজ উদ্যেগে সেচখালটি পরিষ্কার করছেন। কৃষকরা বলছেন, খালটি সচল হলে কয়েক গ্রামের হাজার হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া সহজ হবে। ফলে কমবে সেচ খরচ।