ব্যাটসম্যানরাই নির্ধারণ করবে টাইগারদের ভাগ্য!

স্পোর্টস ডেস্ক: চিন্তা বা দুশ্চিন্তা যাই বলা হোক না কেন, তা খানিকটা ছিলই। শুধু র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকাই নয়, মাঠে আফগানদের সাহসী, আগ্রাসী আর আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের বিপক্ষে পেরে উঠবে তো টাইগাররা? রশিদ খান আর মুজিব উর রহমানের স্পিন ভেলকি সামলাতে পারবে সাকিবের দল? এমন সংশয়ও ছিল কারো কারো কারো মনে।

কিন্তু ৪৮ ঘন্টা আগে গা গরমের খেলায় রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান বিহীন আফগান একাদশের কাছে ৮ উইকেটের পরাজয়ে রীতিমত শঙ্কা এসে ভর করেছে। এখন অতি বড় বাংলাদেশ সমর্থকের মনের কোণেও সংশয়-সন্দেহের কালো মেঘ। প্রিয় জাতীয় দলের পরিনতি নিয়ে বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের একটা অংশ সত্যিই শঙ্কিত

আবার উল্টো মতও আছে। অনেকেরই কথা, আরেহ প্র্যাকটিস ম্যাচের ফল নিয়ে এত ভাবনার কি আছে? সেটার নামই তো প্রস্তুতি ম্যাচ। গা গরমের খেলাও বলা হয়। ঐ ম্যাচের হার-জিত মোটেই ধর্তব্য নয়। যে ম্যাচের ফল ছাপিয়ে দল নির্বাচন, ফর্মেশন চুড়ান্ত করা এবং নিজেদের ঝালিয়ে নেয়াটাই বড়। তাই দেরাদুনে আফগানদের দ্বিতীয় একাদশের কাছে ৮ উইকেটের হারেই সব শেষ হয়ে যায়নি। সেটা নিছকই প্রস্তুতি বা গা গরমের খেলা। আসল লড়াই শুরু হচ্ছে রোববার রাত থেকে। মোদ্দা কথা প্রস্তুতি পর্বে টাইগাররা নাকাল হবার পরও ম্যাচের ফল নিয়ে আছে দ্বিমুখী চিন্তাভাবনা।

প্র্যাকটিস ম্যাচ, ফলের চেয়ে দলের গঠনশৈলী এবং একাদশ ঠিক করা, ব্যাটিং অর্ডার সাজানো ও বোলিং ঝালিয়ে নেয়াই যেখানে মূল বিবেচ্য। যতই এমন কথা বলা হোক না কেন, কঠিন সত্য হলো ১ জুন দেরাদুনে প্র্যাকটিস ম্যাচে টাইগারদের পারফরমেন্স এবং এ্যাপ্রোচ কিন্তু মোটেই ভাল ছিলনা।

যাদের চিন্তার কারণ বলে ভাবা হচ্ছিল, সেই রশিদ খান আর মুজিব উর রহমান খেলেননি। ঐ দুই ভয়ঙ্কর স্পিনার না থাকার পরও রান চাকা থেমে গেছে মাত্র ১৪৫‘এ। আবার দলে ফেরা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকৎ ৩৮ রানের (২২ বলে) লড়াকু ইনিংস খেলতে না পারলেও রান হয়ত তাও হতো না।

একজন ব্যাটসম্যানও রান পাননি। সৌম্য আবারও ব্যর্থ। পাঁচ বলে ২ রানে আউট। শুধু তার একার না, বেশীর ভাগ ব্যাটসম্যানের এ্যাপ্রোচ সঠিক ছিলনা। শুরু ভাল হয়নি। উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গেছে খুব শীঘ্রই। এর পর মুশফিক-সাকিব মোটামুটি সেট হয়েও ইনিংসকে বড় করতে পারেননি। সাকিব আইপিএলে যেমন ১৫ থে ২৫‘এর আশপাশে ঘোরাফেরা করেছেন, ঐ ম্যাচেও ঠিক তেমন খেলে ১৯‘এ ফেরেন সাজঘরে। মুশফিকুর রহিম তার সবচেয়ে শক্ত জায়গা ক্রিকেটীয় শট খেলা বাদ দিয়ে অযথা ইম্প্রোভাইজ শট খেলতে গিয়ে নিজের ইনিংসকে লম্বা করতে পারেননি।

এতো গেল ব্যাটিংয়ের কথা। বোলিংয়ের অবস্থাও ‘তথৈবচ।’ পুঁজি মোটে ১৪৫। তার মধ্যেও শুরুতে ২২ রানে দুই আফগানকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে লড়াইয়ের পূর্বাভাস দেয়া। কিন্তু না! তারপর জোর প্রতিদ্বন্দিতার বদলে নিজেরাই ছন্নছাড়া হয়ে পড়া। আর তাই ১৬ বল আগে ৮ উইকেটের পরাজয়।

মোদ্দা কথা, হতাশাজনক ও অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স। তারচেয়ে বড় কথা, শরীরী ভাষা ও এ্যাপ্রোচটাই ম্যাড়ম্যাড়ে, কেমন যেন ছন্নছাড়া। পরিষ্কার বোঝা গেছে আজকাল টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে ধারা, তার সাথে টাইগারদের এ্যাপ্রোচ ও এ্যাপ্লিকেশনের ফারাক প্রচুর।রাজ্যের অমিল বা অসঙ্গতি। শুরুতে এক প্রান্তে পিঞ্চ হিটিংয়ে ঘাটতি। ৬ ওভারে পাওয়ার প্লে‘তে ওভার পিছু ১০ রান করে তোলার জন্য যে মারদাঙ্গা ব্যাটিং শৈলী দরকার, তামিম ও লিটনের তা থাকলেও সামর্থ্যের প্রয়োগ কম। মাঝখানে ওভার পিছু সাত-আট রান করে নিতে হলে মিডল অর্ডারে অন্তত দুজন ব্যাটসম্যানের ত্রিশের ঘরে রান দরকার। এভাবে এগিয়ে শেষ ৫ ওভার হাত খুলে খেললে ১৮০‘র ঘরে পৌছে যাওয়া কঠিন কিছু নয়।

এসব লক্ষ্য ও পরিকল্পনা এবং ছক বাঁধা ব্যাটিং কম বাংলাদেশের। আর থাকলেও তা জায়গামত বাস্তবে পরিণত করার জন্য মানসিক দৃঢ়তা, কৌশল এবং শট নির্বাচনে দুরদর্শিতা ও দক্ষতা একান্তই দরকার, তার অনেকটাই ছিল অনুপস্থিত।

আর বোলিংতো এক কথায় ‘নির্বিষ’। পুরোপুরি সাকিব নির্ভর। যা করার সাকিবকেই করতে হবে। প্রস্তুতি ম্যাচে সাকিব কিছু করতে পারেননি, তাই বোলিংকে মনে হয়েছে কমজোর। প্রস্তুতি ম্যাচে পেসারদের শুরু ভাল ছিল। তারা প্রাথমিক ব্রেক থ্রু উপহার দিলেও পরে খেই হারিয়ে ফেলেন পরে। তাই ৮ উইকেটের পরাজয়।

৪৮ ঘন্টার মধ্যে সেই দূর্বল-ভগ্ন মানসিকতা আর অনুজ্জ্বল ও দ্যুতিহীন পারফরমেন্স থেকে বেড়িয়ে আফগানদের ওপর ছড়ি ঘোরানো সত্যিই কঠিন। আশার আলো আসলে একটাই- ব্যাটসম্যানদের জ্বলে ওঠা। আফগানদের সাহসী , উজ্জীবিত এবং আগ্রাসী-আক্রমণাত্মক এ্যাপ্রোচ ও টি টোয়েন্টি ফরম্যাট লাগসই ব্যাটিং এবং বৈচিত্রপূর্ণ বোলিংয়ের বিপক্ষে সাফল্য পেতে ব্যাটসম্যানদের ভাল খেলা একান্তই দরকার।

জিততে হলে তামিম, লিটন, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও মোসাদ্দেকদের ব্যাটে রান প্রয়োজন। ব্যাটসম্যানরা যদি টি টোয়েন্টি ফরম্যাট উপযোগি ব্যাটিং করতে পারেন তাহলে অবশ্যই জেতা সম্ভব। তামিম , লিটন ও সাকিবের সামর্থ্য আছে। তারা পারেন। পাওয়ার হিটিং আর শেষ দিকে ইম্প্রোভাইজ করে রান চাঁকা সচল করতে না পারলেও সাব্বির আর মোসাদ্দেকও পারেন রান গতি বাড়াতে।

এখন দেখা যাক, আজ রাতে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় শুরু তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি) সিরিজের শুরুতে টাইগার এ্যাপ্রোচ কেমন থাকে ? ব্যাটসম্যানরা সমর্থের সঠিক প্রয়োগ ঘটাতে পারেন কিনা?