বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়ার আশা মন্ত্রণালয়ের

nasrul hamidডেস্ক রিপোর্ট: আসছে বাজেটে (২০১৮-১৯) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার আশা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এই বরাদ্দের বেশির ভাগই ব্যয় হবে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং গ্যাস অনুসন্ধানে।

বাজেটে সৌরবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তবে বাজেটে বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। বছর বছর বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এই খাতের বরাদ্দও। এ বছরও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, অর্থাৎ ২১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার আশা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। যা ২০১৮-১৯ সালের মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এই বরাদ্দের বেশির ভাগই ব্যয় হবে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণে। কারণ, উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় লাইন নির্মাণ না হওয়ার কারণে এখনো লোডশেডিং (বিদ্যুৎ বিভ্রাট) করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিতরণকারী সংস্থাগুলো। তবে এবারের বাজেটে সৌরবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমি বাজেটে মনে করি যে রিনিউঅ্যাবল এনার্জিতে (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) কমফোর্ট থাকা উচিত। এলপিজিতে কমফোর্ট থাকা উচিত। গ্যাস সেক্টরে আমরা গতবার বাজেটে ভালো সুবিধা পেয়েছি। কেন দেওয়া উচিত? কারণ এগুলো সরাসরি কনজ্যুমারের সঙ্গে রিলেটেড।’

বাজেটে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরো জোরদার করতে বিশেষ বরাদ্দ রাখার তাগিদ দিয়েছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির বহুমুখীকরণের ওপরও জোর দিচ্ছেন তাঁরা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আগামীতে সকল প্রকার তেলভিত্তিক নতুন কোনো প্রকল্পের কোনো দরকার নেই। আমাদের এখন যে ক্যাপাসিটি আছে—প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার (মেগাওয়াট)। সেটাই যথেষ্ট আগামী কয়েক বছরের জন্য এবং চেষ্টা করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে কীভাবে আমরা এই কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যেতে পারি। প্রতিটি পাওয়ার পাম্প যেগুলো আছে; সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়, প্রত্যেকটাকে আমরা সোলার পাওয়ার করে ফেলতে পারি। বিরাট চরাঞ্চল আছে। সেখানে কিন্তু আমরা বিরাট বড় রকমের সোলার প্রজেক্ট করতে পারি। এগুলোকে নিয়ে একটু সিরিয়াসলি চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। যদি আমরা কিছু অ্যালোকেশন (বরাদ্দ) দিয়ে, কিছু পাইলট প্রজেক্ট করে দেখাতে পারি যে এটা সাশ্রয়ী মূল্যে করা সম্ভব তাহলে সোরসেস অব পাওয়ারের বহুমুখীকরণ করা যাবে। এখন তো শুধু গ্যাসভিত্তিক, সেটার বহুমুখীকরণ হবে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বহুমুখীকরণ করতে হবে। তেলনির্ভর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কিন্তু চলতে পারে না। এটি খুব ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার।’

কয়েক বছর ধরেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাজেটে বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপরও জোর দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু যে কৌশলে সরকার এগোচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় আছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অনেকের।

বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতির (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, ‘বাজেটে এ খাত উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগের একটা বিনিয়োগ স্ট্র্যাটেজি থাকা উচিত এবং সেইভাবে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে, সরকারি কর্তৃত্বে, সরকারি মালিকানায় বেসরকারি খাতকে সহায়ক হিসেবে নিয়ে এ খাত উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ আসা উচিত। সেটা বিদ্যুতেও, গ্যাসেও—সাগরের গ্যাস, স্থলভাগের গ্যাস।’

বাজেটে বরাদ্দ আর বেসরকারি বিনিয়োগ থেকে যত অর্থই মিলুক না কেন, ঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় নিশ্চিত করাও এই খাতের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।