প্রতি পিস আনারস ৪ টাকা

রাঙ্গামাটি: রসে ভরপুর কাঁচা-পাকা আনারসে ছেয়ে গেছে রাঙ্গামাটির বাজার।পাহাড়ি এলাকার এসব আনারস যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। বিভিন্ন নৌযান আর সড়কপথে বাজারে আসা আনারসের দাম এখন আকারভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা পিস। তবে পাইকারি বাজারে এ আনারসের পিস আকারভেদে ৪ থেকে ৫ টাকা।

সেই হিসেবে একহালি পাহাড়ি আনারসের দাম মাত্র ১৬ থেকে ২০ টাকা। আবার একশ আনারস পাইকারি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায়। অথচ এ আনারস খুচরা বাজারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় প্রচুর আনারস জন্মায় বলে নানিয়ারচরকে বলা হয় ‘আনারসের রাজধানী’। রাঙ্গামাটির বেশির ভাগ আনারস নানিয়ারচরেই উৎপাদিত হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও পাহাড়ে আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার এখন আনারসে ভরা। প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা থেকে আনারস আসছে রাঙ্গামাটি সদরে। এরপর স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

স্থানীয় একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাঙ্গামাটির বাজারগুলোতে কাঁচা-পাকা আনারসে ভরপুর। এখানে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি পাইকারি বেচাকেনা হয় পাহাড়ি আনারস। তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় অনেক আনারস নষ্ট হয়। ফলে অনেক সময় কম দামে বিক্রি করতে হয়। এতে পাইকারদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার কাঁচা-হলদে বাজারে আসা আনারসের দাম একটু বেশি হয়। এসব আনারসের শ চারশ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এতে উভয়ে লাভবান হয়।

নানিয়ারচরের আনারস চাষি কৃষ্ণ কুমার চাকমা বলেন, চলতি বছর আনারসের ভালো ফলন হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। কিন্তু সঠিক দাম পাচ্ছি না। আনারসের পিস ৪ টাকা হারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। পাশাপাশি বেশির ভাগ ফল নষ্ট হওয়ায় আরও বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এবছর ভালো ফলন হওয়া সত্ত্বেও চাষিদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় দুর্গম অঞ্চলগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হিমাগার না থাকায় আনারস সংরক্ষণ করতে পারছি না। দুটি পাহাড়ে আনারস চাষ করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেছি। আশা করছি, ছয় থেকে সাত লাখ টাকার আনারস বিক্রি করতে পারবো। দাম আরেকটু বেশি হলে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু বাজারে দাম কম হওয়ায় কম দামেই বিক্রি করে দিচ্ছি আনারস।

স্থানীয় বাজারের আনারস ব্যবসায়ী মো. আজগর আলী বলেন, মৌসুমের আগেই বাজারে আনারস আসতে শুরু করেছিল। ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটির চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় আনারস পাঠানো হচ্ছে। তবে দাম ভালোই রয়েছে। আনারসের শ ৪০০ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত পাইকারি কেনাবেচা হচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবহন, যাতায়াত এবং অন্যান্য অনুষঙ্গ বাবদ খরচ থাকায় খুচরা বাজারে আনারসের দাম বেড়ে যায়। আবার পরিবহন ব্যবস্থা ও রাঙ্গামাটিতে হিমাগার না থাকায় বেশির ভাগ আনারস নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকেই কম দামেই আনারস বিক্রি করছেন।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পবন কুমান চাকমা বলেন, এবছর জেলার নানিয়ারচর উপজেলাসহ পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক আনারসের চাষাবাদ হয়েছে। ফলনও হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক।

তিনি জানান, এবছর রাঙ্গামাটিতে ১৮০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টন আনারস উৎপাদন হবে। আগাম যে আনারস বাজারে এসেছিল তা ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস বিক্রি হয়েছিল। ওই সময় এক হালি আনারস ৮০ থেকে একশ টাকা বিক্রি হয়। বর্তমানে আনারসে বাজার ছেয়ে গেছে। তাই দাম একটু কম। এখন পাইকারি বাজারে আনারসের হালি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।