রোজার সময় ঋতুস্রাব নিয়ে নারীদের লুকোচুরি

potita girlডেস্ক রিপোর্ট: রমজানের সময় নারীদের পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সময় কী করা উচিত সেটি নিয়ে মুসলিম মেয়েরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা করছেন।

অনেকে বলছেন, রমজানে তাদের পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সময় কোনো কিছু খেলে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

অথবা ঋতুস্রাব নিয়ে তাদের মিথ্যে কথা বলতে হয়।

সোফিয়া জামিল বিবিসিকে বলেন, অনেকে ঋতুস্রাবের বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে চান না। মুসলিমদের মধ্যে বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হয়।

রমজানের সময় মুসলিমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অভুক্ত থাকেন। এ সময় তারা খাবার খান না এবং পানি পান করেন না।

কিন্তু যেসব নারীর পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব হয়, তারা রোজা রাখতে পারেন না।

অনেক নারী মনে করেন, ঋতুস্রাবের বিষয়টি পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা ভালো।

২১ বছর বয়সী ব্লগার সোফিয়া জামিল বলছিলেন, আমার মা আমাকে বলতেন, যখন তোমার পিরিয়ড শুরু হবে তখন বিষয়টি পুরুষদের বলবে না। এটি শুধু মেয়েরা জানবে।

তিনি আরও বলেন, সে জন্য রমজানে পানি খাওয়ার সময় আমার বাবাকে আসতে দেখলে দ্রুত গ্লাসটি নামিয়ে ফেলতাম এবং ওনার সামনে থেকে চলে যেতাম। আমার মা আমার কক্ষে খাবার দিয়ে যেত এবং চুপিচুপি খেয়ে ফেলার পরামর্শ দিত।

সোফিয়া জামিল নিউইয়র্কে বসবাস করেন। তিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। একবার রমজানে পিরিয়ডের সময় খাবার খেতে গিয়ে তার ভাইয়ের সামনে পড়েছিলেন।

ওই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সোফিয়া বলেন, আমার ভাই যখন আমাকে খেতে দেখল, তখন আমার মুখে কামড় পড়ল। সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল আমি যে খাবার খাচ্ছি সেটি হাতেনাতে ধরে আমাকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছিল।

তিনি বলেন, আমি যদি বলতে পারতাম যে এটি খুব স্বাভাবিক এবং আমার ধর্মে বলা আছে- আমি যদি যথেষ্ট পবিত্র না হই তা হলে আমি রোজা পালন করতে পারব না।

রমজানের সময় একজন মুসলিম সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেমন খাবার কিংবা পানি খেতে পারেন না, তেমনি রমজানের সময় যে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেও যেতে পারেন না।

নারীদের পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সময় তারা যেমন রোজা পালন করতে পারেন না, তেমনি কোরআন শরিফ পড়তে কিংবা মসজিদে যেতে পারেন না।

গর্ভবতী হলেও রোজা পালন না করা গ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া শারীরিক কিংবা মানসিক অসুস্থতা, ভ্রমণের সময় রোজা পালন না করার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য।

তা ছাড়া রোজা রাখার কারণে যদি তীব্র ক্ষুধা কিংবা তৃষ্ণার কারণে জীবন হুমকির মুখে পড়ে তা হলে রোজা ভঙ্গ করা যেতে পারে।

মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাবরিন ইমতায়ির বলেন, ঋতুস্রাব নিয়ে যাতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয় সে জন্য তিনি মানুষজনকে উৎসাহিত করছেন।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাবরিন ইমতায়ির বলেন, আমার পরিবার এক্ষেত্রে অনেক উদার। কিন্তু কিছু মেয়ে আছে যারা রমজানের সময় পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সামনে পিরিয়ডের সময় কিছু খেতে চায় না। পিরিয়ডের সময় মেয়েরা নিজেদের নোংরা মনে করে এবং লজ্জা পায়।

১৮ বছর বয়সী সাবরিনের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ধরনের। তিনি রমজানে পিরিয়ডের সময় পরিবারের সব সদস্যের সামনে খাবার খেতে পারতেন।

তিনি বলেন, আমি খাবার কিনতে বাইরে যাচ্ছিলাম। তখন আমার ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করল কেন খাবার আনতে যাচ্ছি? আমি তাকে বললাম, আমার পিরিয়ড চলছে। সে বিষয়টি খুব সহজভাবে নিয়েছিল।

সাবরিন ইমতায়ির বলেন, ঋতুস্রাবের সময় কী করতে হয় সেটি তার মা তাকে শিখিয়েছিল। কিছু দিন আগ পর্যন্ত আমি বিষয়টি নিয়ে মানুষের কথা বলিনি। কারণ এটিকে নিষিদ্ধ বিষয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু মেয়েদের সবার ঋতুস্রাব হয়। এটি স্বাভাবিক বিষয় এবং আমাদের উচিত এটিকে হিসেবে গ্রহণ করা, বলছিলেন মিস সাবরিন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মেয়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।

এক নারী লিখেছেন- রমজানে আমার পিরিয়ডের সময় আমি কক্ষের দরজা বন্ধ করে খাবার খেয়েছি। আমার মা চাইতেন আমার বাবা ও ভাইয়েরা যাতে বিষয়টি না জানে। কিন্তু বিষয়টি আমার কাছে খুব অদ্ভুত লাগত। আমি তো এমন কোনো কাজ করছি না যেটি আমাকে লুকিয়ে করতে হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।