নির্বিষ পারফরম্যান্সে প্রতিরোধহীন পরাজয়

shakib al hassanস্পোর্টস ডেস্ক: তাকে নিয়ে ছিল ভয়। ভেতরে ভেতের দলের প্রত্যেকেই তাকে নিয়ে করেছিলেন আলোচনা। কিভাবে সামলাবেন সেই ছকও কাটছিলেন। ওই আলোচনা পছন্দ হয়নি অধিনায়কের। গণমাধ্যমে বললেন, খেলোয়াড়দের মধ্যে তাকে নিয়ে নেই কোনো আলোচনা! কিন্তু ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলেন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা রশিদ খানই। বিস্ময়কর রশিদ খান।

টি-টোয়েন্টির নম্বর ওয়ান বোলার রশিদ খান। নিজের মান রাখলেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন তাকে খেলা মোটেও সহজ নয়। আর পুরো আফগানিস্তান দল দেরাদুনে বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি শেখাল। ৪৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারল টাইগাররা। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৬৭ রান তুলে আফগানিস্তান। জবাবে ১২২ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস, সেটাও ৬ বল আগে।

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষায় ছিল না প্রতিদ্বন্দ্বীতার ছাপ। গা-ছাড়া ভাবের পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে হাল্কাভাবে নেওয়ার ছাপ স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। নির্বিষ বোলিং আর অপরিকল্পিত অধিনায়কত্বে মন্থর উইকেটে বড় পুঁজি পায় আফগানিস্তান। এরপর ছন্নছড়া ব্যাটিং আর আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে এলোমেলো হয়ে যায় টাইগার শিবির।

ভিন্ন চিত্র আফগান শিবিরে। অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং। ফিল্ডিংয়েও লেটার মার্কস। সব কিছু মিলিয়ে দারুণ দিন কাটাল আফগানরা। আর তাদের উড়ন্ত দিনে বেসামাল বাংলাদেশ শিবির। জয় তো দূরের চিন্তা, লড়াইটাও করতে পারল না সাকিবের দল।

অবশ্য সাকিব সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলেন, র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে থাকায় আফগানিস্তানই সিরিজে ফেভারিট। তাই বলাই যায়, ফেভারিটদের মতোই খেলেছে রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী ও মোহাম্মদ শাহজাদরা।

বড় পুঁজির ভিত শুরুতেই গড়ে দিয়েছিলেন শাহজাদ ও উসমান গনি। ৬২ রান যোগ করেন দুই ব্যাটসম্যান। নবম ওভারে ২৬ রান করা গনিকে আউট করে প্রথম সাফল্য দেন রুবেল হোসেন। শাহজাদ ৪৬ রানে ফেরেন সাকিবের বলে। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন। ৮৬ রানে তাকে ফেরানোর পর আফগানিস্তানকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। মূল নায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৯০ ও ৯১ রানে মাহমুদউল্লাহর ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন নাজিবুল্লাহ জারদান ও মোহাম্মদ নবী। ১ ওভারে ১ রানে ২ উইকেট মাহমুদউল্লাহর।

অপরপ্রান্ত থেকে সমর্থন না পাওয়ায় দ্রুত রান তুলে আফগানিস্তান। শেষ দিকে ঝড় তুলেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও শফিক উল্লাহ। সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ১৮ বলে ৩৬ এবং সফিকউল্লাহ ৮ বলে ২৪ রান তুলেন। ১৬ ওভার শেষে আফগানিস্তানের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১১৫। সেই তারাই শেষ ৩ ওভারে ৪ উইকেট হারালেও রান তুলেছে ৫২! তাতেই ম্যাচ ফসকে যায় বাংলাদেশের।

আফগানিস্তানের বিশাল পুঁজি তাড়া করে জয় পেতে শুরুতেই দারকার ছিল ঝোড়ো সূচনা। কিন্তু সময়ের দাবি মেটাতে পারেননি তামিম। মুজিব-উর-রহমানের করা ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ তামিম। তিনে নামা সাকিব পাওয়ার প্লে শেষ হবার আগেই আউট ১৫ রানে। লিটন ২০ বলে ৩০ তুলে আস্থা দেখাচ্ছিলন। সাকিবের উইকেট তুলে নেওয়ার পর লিটনকেও সাজঘরের টিকিট দেন মোহাম্মদ নবী।

১০ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৮০ রান। শেষ ১০ ওভারে লাগত ৮৮ রান। ক্রিজে থাকা মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের ওপর ছিল ভরসা। কিন্তু মুশফিক ১১তম ওভারের প্রথম বলেই বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত করেন! রশিদ খানকে প্রথম বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। দ্বিতীয় বলে সাব্বির রহমান এলবিডব্লিউ। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও হয়নি। কিন্তু রশিদ খান ঠিকই নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে নেন মোসাদ্দেকের উইকেট। ৩ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট ১৯ বছর বয়সি রশিদ খানের ।

মাহমুদউল্লাহ ২৫ বলে ২৯ রান তুলে বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু শাপুর জারদান তাকে ফেরানোর পর সব আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ে নেমেই দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান রশিদ খান, বোলিংয়ে নেন ৩ উইকেট। আর ফিল্ডিং, সেটাও তো চোখ ধাঁধানো। শেষ ব্যাটসম্যান রাহীর ক্যাচ নিতে দারুণ পারদর্শীতা দেখান রশিদ খান। তাতেই ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতে।বলার অপেক্ষা রাখে না এক রশিদ খানই দুই দলের বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে আফগানিস্তান। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের অভিষেক দারুণভাবে রাঙিয়ে রাখল আফগানিস্তান। মঙ্গলবার একই মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচ। বাংলাদেশ কি পারবে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে? নাকি এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতবে র‌্যাঙ্কিংয়ে আটে থাকা আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের পক্ষেই পাল্লাটা ভারী।