খালেদা জিয়ার প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার

khalada ziaডেস্ক রিপোর্ট: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট বা পিডব্লিউ) প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার পুরান ঢাকার বকশিবাজারস্থ অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালত আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরোয়ানা প্রত্যাহারের এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে এদিন মামলাটিতে খালেদা জিয়ার জামিন আগামী ২৮ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন আদালত। আর মামলার আরেক আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে এক মাসের সময় আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এদিন বেলা ১১টা ৬মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে উঠলে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন। আর গত ১৭ মে করা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের আবেদনটি মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।

এরপর মামলার আরেক আসামি জিয়াউল হক মুন্না চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যাবেন জানিয়ে তার পক্ষে এক মাসের সময় চান তার আইনজীবী আমিনুল হক। আর ওই সময়ের মধ্যে মুন্না ওমরাহ হজ পালন করে যথা সময়ের মধ্যে ফিরে আসবেন বলে আদালতকে অবহিত করেন তিনি।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মুন্না সরকারি চাকরিজীবী। তার জিও হয়ে থাকলে আর তা আদালতে দাখিল করা হলে সেটা আদালতের বিবেচনা। সরকার তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকলে বাকী বিবেচনা আদালতের।

খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে কাজল বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে খালেদা জিয়াকে আর আদালতে হাজির করা হচ্ছে না। একজন ডাক্তার তাকে দেখে বলেছেন, তিনি অসুস্থ। ফিজিক্যালি আনফিট ফর টুডে। এ শব্দের কী ব্যাখা আমি তা বুঝি না। আজকের জন্য আনফিট। এটা কি ধরনের একটা আইনগত প্রক্রিয়া আমার বোধগম্য নয়। আনফিট হলে অনেক দিনের জন্য হতে পারেন। আজকের জন্য আসবেন না। তিনি কী আসবেন না, না ডাক্তার সাহেব তাকে পাঠাচ্ছেন না এটা বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে মনে করেছিলাম হাঁটু বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে খালেদা জিয়া হয়তো আসছেন না। কিন্ত কিছুদিন আগে পিজি হাসপাতালে গিয়ে তিনি হেঁটে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডাক্তার একথা লিখে কেন পাঠাচ্ছেন না তা আমার বোধগম্য হয় না। এটা পরিকল্পিত না অপরিকল্পিত, এটার মধ্যে কী তথ্য আছে তা বোঝার জন্য ডাক্তারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত বলে আদালতকে জানান মোশাররফ হোসেন কাজল। আমরা ডাক্তার সাহেবের প্রক্রিয়ার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছি। আজ আসতে পারবেন না, কাল সুস্থ হয়ে যাবেন এটা কেমন কথা। ডাক্তারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে এ পরিস্থিতির উত্তোরণ ঘটবে বলে আদালতকে জানান তিনি।

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসলে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যেত। মামলাটি নিষ্পত্তি করতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন তিনি।

আর প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের বিষয়ে তার কোনো আপত্তি নেই বলে জানান দুদক প্রসিকিউটর।

জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আপনি (আদালত) খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আজ আদালতে হাজির হওয়ার উপযুক্ত না। একথাটার এতো সহজ মিনিং আমরা এভাবেই বুঝেছি। এখন অন্য কেউ যদি অন্যভাবে বুঝে থাকে।

এরপর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটিতে যুক্তি উপস্থাপন চলছে। এখন যে তারিখটা দেবেন ওই তারিখের মধ্যে খালেদা জিয়া বের হতে কি না তা তো আমরা জানি না। এর জবাবে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করলে আমরা তো আর জোর করে জেল থেকে বের হতে পারব না। কাজল বলেন, তাহলে তো পরবর্তী তারিখে আমাকে আবার পোডাকশন ওয়ারেন্ট দিতে হবে। মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আপনাকে দিতে হবে না। আমরা দিয়ে দিব। আর নয় আপনাকে সাথে সাথে অবহিত করবো প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার, জামিন ২৮ জুন পর্যন্ত বর্ধিত আর মুন্নাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।

এদিন খালেদা জিয়া পক্ষে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা, আমিনুল ইসলাম, জিয়া উদ্দিন জিয়া, হান্নান ভূঁইয়া, নুরুজ্জামান তপন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি অব্যাহত রয়েছে এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বাকী আছে।

এদিকে একই বিচারক গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেন। ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠান। তিনি এখন নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।