যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ট্যাংকলরিতে গ্যাস সিলিন্ডার অবৈধ বহন, বিস্ফোরণের আশংকা

loryস্টাফ রিপোর্টার, যশোর: ট্যাংকলরির পিছনে বড় অক্ষরে লেখা আছে ‘পেট্রোলিয়াম জাতীয় দাহ্য পদার্থ বিপদজনক সাবধান’। কিন্তু সতর্কতামূলক এই লেখার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। ট্যাংকলরির উপরেই ঝুুুঁকি নিয়ে বহন করা হচ্ছে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার।

এভাবে খুলনা থেকে প্রতিদিন শত শত গ্যাস সিলিন্ডার যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। ট্যাংকলরির উপরে গ্যাসের সিলিন্ডার বহনের কারণে যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। বিস্ফোরিত এলাকা পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কেননা গ্যাসের মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ট্যাংকলরিতে বহনে বিস্ফোরিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় অসাধু খুলনার সেখানে সেখানে এলপি গ্যাসের ব্যবসা খুলে ট্যাংকলরিতে করে গ্যাস পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। প্রশাসনের সঠিকভাবে জবাবদিহিতা ও তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় এই অনিয়ম বেড়েই চলেছে।

খুলনার বিস্ফোরক পরিদর্শক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, ট্যাংকলরিতে গ্যাস বহন করা আইন বহির্ভূত ও ঝুঁকিপূর্ণ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, খুলনা নগরীর বড়বাজার খালিশপুর, দৌলতপুর, শিরোমনি,শিববাড়ি, সোনাডাঙ্গা, বয়রায় রাস্তার পাশে খোলামেলাভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে। মুলত অবৈধ ব্যবসা জোরদার করার জন্য তারা দোকান খুলে বসেছেন। এইসব দোকানের সামনে সকাল থেকেই সিরিয়াল দিয়ে ট্যাংকলরি এসে দাঁড়ানো শুরু হয়। সেখান থেকে ট্যাংকলরির উপর গ্যাসের সিলিন্ডার উঠিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় যশোর সদর, শার্শা বেনাপোল, ঝিকরগাছা ,মণিরামপুর ,ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়। দোকান মালিকদের পাশাপাশি ট্যাংকলরি চালকেরাও বাড়তি টাকা আয়ের ধান্দায় নির্বিঘেœ গ্যাসের সিলিন্ডার বহন করছে। এমনিতেই প্রতিটি ট্যাংকলরির পিছনে বড় অক্ষরে লেখা থাকে পেট্রোলিয়াম জাতীয় দাহ্য পদার্থ বিপদজনক সাবধান। তার পরেও ঝুঁকির উপর ঝুঁকি নিয়ে উঠানো হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার। এতে করে বিপদের আশংকা বাড়ছে। সিলিন্ডার গাড়িতে বহন করায় বিস্ফোরিত হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

খুলনার শিরোমনি মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শাহজালাল এন্টারপ্রাইজের গোডাউনের সামনে এসে দাঁড়ায় যশোর-ঢ-৪১-০০৭২ নম্বরের একটি ট্যাংকলরি। সাথে সাথে ওই দোকানের একজন কর্মচারি মাথায় করে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে মই বেয়ে উপরে উঠতেই চালক তা ট্যাংকলরির উপরে বসিয়ে দেয়। সাংবাদিক পরিচয়ে ট্যাংকলরি চালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় অবৈধভাবে কেনো গ্যাসের সিলিন্ডার নেয়া হচ্ছে। এসময় চালক কোন কথা না বলে ট্যাংকলরি নিয়ে চলে যান। এসময় শাহজালাল এন্টারপ্রাইজের মালিক গিয়াস উদ্দিন গোডাউনে ছিলেন না। কিন্তু শাওন নামে এক যুবক তার ভাই পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শিরোমনির কয়েকজন সাধারণ ব্যবসায়ীর সাথে। তারা এই প্রতিবেদককে জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মনীতি না মেনে গ্যাসের ব্যবসা করায় তারা ভয়ে ভয়ে থাকেন। পথচারী আসাদুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেনসহ আরো কয়েকজন জানিয়েছেন, যখন পেট্রোল, অকটেন, ডিজেলের গাড়িতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া হয় তাদের তাদের মাঝে আতংক বিরাজ করে। কখন না জানি দুর্ঘটনায় সৃষ্টি হয়। গ্যাস সিলিন্ডারের অবৈধ বহন বন্ধে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ দেয়ার দাবি জানান তারা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খুলনার বিস্ফোরক পরিদর্শক ফরিদ উদ্দীন আহমেদের সাথে। তিনি জানান, খুলনা থেকে ট্যাংকলরিতে করে বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাস সিলিন্ডার পাঠানো হচ্ছে এমন অভিযোগ শুনেছেন। এটা অবশ্যই আইন বহির্ভূত ও ঝুঁকিপূর্ণ। মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার বহন করা হলো সবচেয়ে বেশি বিপদজনক। কেননা উত্তীর্ণ সিলিন্ডার যে কোন সময় বিস্ফোরণের আশংকা থাকে। জ্বালানি তেল বহনকারী ট্যাংকলরিতে যদি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় তবে আশেপাশের এলাকা জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শংকা রয়েছে। গ্যাস ব্যবসায়ী ও ট্যাংকলরি মালিকদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে। তবুও গোপনে ট্যাংকলরিতে করে গ্যাস সিলিন্ডার পাঠাচ্ছেন তারা। অবৈধ পন্থাটি বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান। কেননা গ্যাস বহন করার জন্য রোড ট্যাংকার (গ্যাসাধার) রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, লাইসেন্স ছাড়া গ্যাসের ব্যবসা সম্পূর্ণ বেআইনি। তবে অনেকেই তা মানছে না। জনবল কম থাকায় অসাধুদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়না।

বিআরটিএ খুলনা বিভাগীয় পরিচালক জিয়াউর রহমান জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ট্যাংকলরিতে গ্যাস সিলিন্ডার বহন করার অভিযোগে প্রায় জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ট্যাংকলরির ফিটনেস লাইসেন্সের সময় মালিকদের নিষেধ করা হয় গ্যাস সিলিন্ডার বহন না করার জন্য।

ফায়ার সার্ভিস যশোর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক আব্দুর রফিক বলেন, ট্যাংকলরিতে বহন করার সময় যদি কোন গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির র্সষ্টি হতে পারে। আগুন ছড়িয়ে পড়বে আশেপাশের এলাকাজুড়ে। তাই ট্যাংকলরিতে গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা অবশ্যই জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।