রিয়াল ছাড়ছেন রোনালদো, দাবি পর্তুগিজ গণমাধ্যমের!

ronaaldoস্পোর্টস ডেস্ক: ঠিক যেন গত মৌসুমেরই পুনরাবৃত্তি। গত বছর ঠিক এই সময়টাতেই বড়সড় এক বোমা ফাটায় পর্তুগিজ পত্রিকা ‘আ বোলা’। ক্লাব মৌসুম শেষ করে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো তখন পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ খেলতে উড়ে যান রাশিয়ায়। ঠিক তখনই পত্রিকাটি এক প্রতিবেদনে দাবি করে, রিয়াল ছাড়ার কথা ভাবছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। পর্তুগাল জাতীয় দলের সতীর্থদের কাছে রোনালদো নিজেই নাকি বলেছিলেন রিয়াল ছাড়ার পরিকল্পনার কথা।

শেষ পর্ন্ত অবশ্য সেই গুঞ্জন সত্য হয়নি। রোনালদো থেকে যান রিয়ালেই। তবে বছর ঘুরে আরেক জুনে আরও বড় এক বোমা ফাটাল পর্তুগিজ গণমাধ্যম। এবার আর ভাবাভারি নয়, পর্তুগালের পত্রিকা ‘রেকর্ড’ সরাসরিই বলে দিয়েছে, রিয়াল ছাড়তে যাচ্ছেন রোনালদো!

মজার ব্যাপার হলো, এবারও পর্তুগিজ গণমাধ্যম বোমাটা ফাটাল গত বারের মতো পরিস্থিতিতেই। এবারও ক্লাব মৌসুম শেষ করে পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে সেই রাশিয়া বিশ্বকাপেরই প্রস্তুত নিচ্ছেন।

এবারের গুঞ্জন অবশ্য নতুন নয়। গত ২৬ মে কিয়েভে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের পর রোনালদো নিজেই রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার ইঙ্গিত দেন। যদিও পরদিনই আবার পর্তুগিজ সুপারস্টার পাল্টে ফেলেন সুর। কিন্তু কোচের পদ থেকে জিনেদিন জিদানের সরে দাঁড়ানোর মধ্যদিয়ে রোনালদোর রিয়াল ছাড়ার সম্ভাবনাই আরও জোরালো হয়!

কারণ, রিয়াল মাদ্রিদে কোচ জিদানের সঙ্গে দারুণ একটা জুটিই গড়ে তুলেছিলেন রোনালদো। বেতন-ভাতা নিয়ে ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে দেন-দরবারে কোচ জিদান সব সময়ই রো্নালদোর পাশে থেকেছেন। কিন্তু প্রিয় সেই কোচ চলে যাওয়ায় রোনালদোর উপর থেকে যেন অভিভাকত্বের ছাতাটা নাই হয়ে গেছে!

যাই হোক, রেকর্ড স্পষ্ট দাবি করেছে, রোনালদোর বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে অস্মতি জানিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। গত মঙ্গলবার রিয়ালের মহাপরিচালক হোসে অ্যাঙ্গেল সানচেজের সঙ্গে এক বেঠকে মিলিত হন রোনালদোর এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেজ। গত জানুয়ারিতে প্রস্তাবিত চুক্তি অনুসারে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি সুরাহা করাটাই নাকি ছিল বৈঠকের উদ্দেশ্য।

কিন্তু বৈঠকে সভাপতি পেরেজের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক হোসে অ্যাঙ্গেল সানচেজ বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। সানচেজ নাকি এজেন্ট মেন্ডেজকে সরাসরিই বলে দিয়েছেন, রোনালদো চাহিদা অনুযায়ী নতুন চুক্তি করতে তৈরি নয় রিয়াল!

বেতন-ভাতা নিয়ে ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে রোনালদোর মতানৈক্য গত মৌসুম থেকেই। গত মৌসুমে বেশ কয়েকবারই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি তোলেন রোনালদো। ৩৩ বছর বয়সী রোনালদোর দাবিটা যুক্তি সংগতও। নিশ্চিতভাবেই বর্তমান ফুটবলের সেরা দুই ফুটবলারের একজন তিনি। অথচ বেতন প্রাপ্তির দিক থেকে তিনি ৬ নম্বরেও নেই। মানে তার চেয়েও বেশি বেতন পান অন্তত ৬ জন।

কিন্তু রোনালদোর সেই দাবিতে কান দেননি সভাপতি পেরেজ। বরং বারবার দাবি তোলায় রোনালদোর প্রতি তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেন রিয়ালের কর্তারা। তবে তিতিবিরক্ত হলেও গত জানুয়ারিতে ঠিকই রোনালদোর চাওয়া মেনে নিয়ে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয় রিয়াল। নতুন চুক্তির প্রাথমিক খসড়াও নাকি তৈরি করে রিয়াল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া পর্ন্তই। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির কার্কর পদক্ষেপ আর নেয়নি। বরং বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে রিয়াল কর্তারা ঝুঁকে পড়েছেন নেইমারকে কেনার বিষয়ে!

স্বাভাবিকভাবেই ক্লাব কর্তাদের এই পল্টিবাজি মনোভাব ভালোভাবে নিতে পারেননি রোনালদো। তিনি অসম্মান বোধ করছেন। গত ২৬ মে রিয়াল ছাড়ার ইঙ্গিত দেওয়ার সময়ও এটাই বোঝাতে চেয়েছেন রোনালদো। তিনি স্পষ্টই বলেন, প্রশ্নটা অর্থের নয়, আত্মসম্মানের, ‘রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বসেরা ক্লাব। জানি, রিয়ালের মতো সেরা জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। কিন্তু জীবনে সাফল্যই সব নয়, গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কিছুই আছে।’

তারপরও সমস্যা সমাধানের আশায় ছিলেন রোনালদো। ভেবেছিলেন, ক্লাব কর্তারা হয়তো তাদের কথা রাখবেন। বিগত বছরে এনে দেওয়া অবিশ্বাস্য সাফল্যের সুবাদে তাকে আলাদা মর্দা দেবেন। কিন্তু রোনালদোর সেই আশার সুতোও ছিঁড়ে গেছে মঙ্গলবার, ক্লাব নতুন চুক্তির সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়ায়।

রেকর্ড-এর দাবি, ক্লাব কর্তাদের এই আচরণে রোনালদো এতোটাই ক্ষুব্ধ এবং হতাশ যে, রিয়াল ছাড়ার পাকা সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু রিয়াল ছেড়ে কোথায় যাবেন? এখনো কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। তবে রেকর্ড জানিয়েছে, ইতালি, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড-তিন দেশের যেকোনো এক দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।