‘বরাদ্দ অর্থে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন অসম্ভব’

rosida kডেস্ক রিপোর্ট: ‘সরকার মানসম্মত ও টেকসই উন্নয়নমূলক শিক্ষার স্বপ্ন দেখালেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শিক্ষায় পরিচালনা খাতে অধিকাংশ ব্যয় ধার্য করা হয়েছে। উন্নয়ন বাবদ তেমন বরাদ্দ রাখা হয়নি। ফলে এ বাজেটে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’ বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন একাধিক শিক্ষাবিদ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বাজেটে শিক্ষা খাতে ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলেও মূল বাজেটের ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছর শিক্ষা খাতের বাজেট ছিল ৫০ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এ বছর এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী  বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট শিক্ষা খাতের উন্নয়নের জন্য মোটেই আশাপ্রদ নয়। গত বছর মূল বাজেটের ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। অথচ এবার টাকার অঙ্কে বাড়ালেও প্রকৃত অর্থে শিক্ষা খাতে বাজেট কমানো হয়েছে। এবার মূল বাজেটের ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জিডিপি ২ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় শিক্ষার জন্য ন্যূনতম জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও সেটি প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। বাজেটে শিক্ষা খাতের পরিচালনা বাবদ যেমন-শিক্ষকদের বেতন, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খরচের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। অথচ উন্নয়ন বাবদ ১৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।’

শিক্ষকদের বেতন ও অবকাঠামো জরুরি, তবে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ কোথায়? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, জ্বালানি, অবকাঠামো, জনপ্রশাসনে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তদ্রূপ শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানান তিনি।

এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, দেশে পদ্মা সেতু অবশ্যই প্রয়োজন আছে, কিস্তু মানব সক্ষমতা বিনির্মাণের সেতু তৈরির জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষানীতিতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষানীতির আলোকে দেশের জিডিপির ন্যূনতম ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে ২ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একদিকে সরকার বলে, নীতি করবো, স্বপ্ন তৈরি করবো, মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখাবে অথচ বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যাবে না, তা সমীচীন নয়। শিক্ষাখাতের বরাদ্দ অর্থে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন অসম্ভব। অন্যন্যা বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না, তার সঙ্গে যথাযথ কৌশল ও ব্যয় করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক একরামুল হক  বলেন, শিক্ষা খাতে বাজেট শুধু টাকার অঙ্কে বেড়েছে, শতকরা হারে বাড়েনি। প্রস্তাবিত বজেটে শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা নেয়া সম্ভব হবে না। বরাদ্দকৃত অর্থ দ্বারা আগামী বছর শিক্ষার কোনো ভালো সংবাদ বা ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে না।