১০০ আসন চায় শরিকেরা, ৫০-৬০টি আসনে মুখোমুখি জোটের নেতারা

২০ দলীয় জোটডেস্ক রিপোর্ট: ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো প্রায় ১০০ আসন দাবি করবে বিএনপির কাছে। এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি আসনে বিএনপি ও জোটের নেতারা মুখোমুখি হয়ে আছেন। অনেক জায়গায় মনোমালিন্য, কোথাও কোথাও সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে বিএনপি শরিকদের সঙ্গে এখনই আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করছে না।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আগে জোটের সঙ্গে আসন নিয়ে আনুষ্ঠানিক বসার সম্ভাবনাও কম। তবে শরিক দলগুলোর কাকে কয়টি আসন দেওয়া হবে, তার একটা প্রাথমিক হিসাব-নিকাশ বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা করেছেন। খবর প্রথম আলো।

এ ছাড়া বিকল্পধারা, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের মতো যেসব দল কোনো জোটে নেই, সেসব দলের সঙ্গে যদি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়, তাদের ব্যাপারেও বিএনপি উদার থাকবে বলে দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, ভেতরে-ভেতরে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও তিনটি বিষয়ে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আসনবিষয়ক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন না তাঁরা। আর তা হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না এবং নির্বাচনের পরিবেশ কেমন থাকে।

তবে এখন পর্যন্ত বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। এটি ধরেই বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি মুক্ত হয়ে ফিরলেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন। সে পর্যন্ত শরিকদের অপেক্ষা করতে হবে।

দলের একটি সূত্র জানায়, যদি দেখা যায়, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তখন নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর মত নেওয়া হবে। নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হলে খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ৯টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দলগুলো হলো বিএনপি, এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস ও মুসলিম লীগ। জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না।

এসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীসহ উল্লিখিত দলগুলো এবং এর বাইরে অনিবন্ধিত দল জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ইসলামী ঐক্যজোটসহ (একাংশ) কয়েকটি শরিক দল প্রায় ১০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়। তারা এলাকায় যাওয়া-আসা করছে। এর মধ্যে জামায়াত ৭০ থেকে ৮০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

শরিক দলগুলোর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিএনপির জোটের নিবন্ধিত শরিক দল এলডিপি, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি, মুসলিম লীগের (কামরুজ্জামান) ওপর সরকারি মহলের দৃষ্টি রয়েছে। তাদের বিএনপির জোট থেকে বের করে নিতে তৎপরতা রয়েছে। এর মধ্যে এলডিপি, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপ বিএনপির কাছে ১০ থেকে ১২টি আসনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা চায়। আসন নিয়ে বোঝাপড়া না হওয়ায় এসব দলের শীর্ষ নেতৃত্বে অস্বস্তি আছে। এর সুযোগ নিতে চাইছে সরকারি মহল।

বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা অংশ নিইনি। এবারের নির্বাচন খুব কাছাকাছি এসে গেছে। নির্বাচন করি বা না-করি, সিদ্ধান্ত যা-ই হোক; শরিকদের যারা উপযুক্ত তাদের আসনের মীমাংসা হওয়া উচিত। এটি যত তাড়াতাড়ি হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকা সম্ভব হবে।’

জোটের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা চান আগেভাগেই বিএনপির সঙ্গে সংসদীয় আসন নিয়ে একটি সমঝোতা। তাঁদের যুক্তি, বিএনপির সঙ্গে একমত হয়ে তাঁরা ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। এখনো নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ হয়নি। উপরন্তু জোটের প্রধান খালেদা জিয়া কারাবন্দী। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জন-সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, মনোনয়নের ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়া জরুরি। কারণ, জোটের ছোট দলগুলোর জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে চাপাচাপিকে শোভন মনে করছেন না। যদিও জামায়াতসহ নিবন্ধিত সব দল এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী।

এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে ২০ দল নির্বাচনে যাবে কি না, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলগুলোর যারা নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, তাদের ব্যাপারে বিএনপির ইতিবাচক চিন্তা করা উচিত। কারণ, নবাগত প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।

অবশ্য শরিক দলের নেতাদের কেউ কেউ আবার খালেদা জিয়ার কারামুক্তির বিষয়ে ফয়সালার পর নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরুর পক্ষপাতী। তবে জোটনেত্রীকে কারাগারে রেখে আসন সমঝোতার বিষয়ে চাপাচাপি করাটা অশোভন মনে করে শরিকেরা বিষয়টি আলোচনায় তুলছে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে গেলে, সেই পরিবেশ তৈরি হলে এবং চেয়ারপারসন মুক্ত হলে তখন শরিকদের নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করি, এবার ভুল-বোঝাবুঝি হবে না।’ বিকল্পধারা, গণফোরাম ও নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান বিএনপির মহাসচিব। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়েই চিন্তা করছি।’