কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবি রাবি শিক্ষকবৃন্দের

রাবি প্রতিনিধি: সারা দেশে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৪ শিক্ষক।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত মার্চ মাস থেকে চলমান কোটাসংস্কার আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। তাদের এই জনসমর্থিত আন্দোলন শুরু থেকেই অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ ছিল। আমরা মনে করি, নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন সংগ্রাম করতেই পারে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর সবসময় এ ধরনের স্বাধীনচিন্তা ও মতপ্রকাশকে উৎসাহিত করবে।

গত কয়েকদিন দেশব্যাপী পুলিশি হেনস্তা ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একটি শান্তিপূর্ণ জমায়েতের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিবাদে রাবিতে ও ঢাবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীরা জমায়েত হলে সেখানেও ছাত্রলীগ দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা চালায়। এছাড়া রাবি শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের পাশে পতাকা মিছিলের জন্য জমায়েত হলে ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এতে এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে ও পা ভেঙে যায়। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের গভীর মৌনতা আমাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

পুলিশ ও ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নাগরিক সমাবেশে পুলিশের হামলায় এবং ঢাবির এক শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবকে লাঞ্ছিত করা হয়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের আগ্রাসী আচরণ এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মামলা-হামলার ভয়ে তাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।

এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে চারদিকে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মুক্ত জ্ঞানচর্চাকে ভয়ানকভাবে বাধাগ্রস্ত করে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করে মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি, বরং নীরবতা দেখতে পেয়েছি। এমনকি শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার, মামলা ও রিমান্ডে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, শাতিল সিরাজ, সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, প্রভাষক আব্দুল্লাহীল বাকী, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্ত্তী, সহকারী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাবিব জাকারিয়া, সহকারী অধ্যাপক কাজী শুসমিন আফসানা, বাংলা বিভাগের ড. সৌভিক রেজা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া এ দাবির সঙ্গে সংহতি জানালেও অনিবার্য কারণবশত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি। তারা হলেন, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান।