ডেস্ক রিপোর্ট: তিন দিনের সফরে আজ ঢাকা আসছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। নির্বাচনী বছরে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের ওই রাজনীতিকের হাই প্রোফাইল ঢাকা সফরে নিরাপত্তা বিশেষত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতা বাড়ানো এবং আন্তঃসীমান্ত ব্যবস্থাপনা- এ ৩ ইস্যুই প্রাধান্য পাচ্ছে।
দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিও থাকছে আলোচনার সূচিতে। তিনি আগামী ১৫ই জুলাই সারদা পুলিশ একাডেমি পরিদর্শন করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার সঙ্গী হবেন। সারদায় দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তি ও ফরেনসিক ল্যাবের উদ্বোধন করবেন।
ল্যাবটি ভারতের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত। সেখানে দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভারতের প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমি ও বাংলাদেশের সারদা পুলিশ একাডেমির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ক একটি চুক্তিও সই হবে।
পৃথক আয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (এসিসি) এবং ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং বাংলাদেশ-ভারত রিভাইজড ট্রাভেল অ্যাগ্রিমেন্ট সই হওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে। সফরকালে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাবেন। তিনি বিজিবি সদর দপ্তরও পরিদর্শন করবেন। তবে এবারের সফরে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আমন্ত্রণে শুক্রবার বিকালে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সফরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি। ওই সব বৈঠকে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রচরমপন্থা মোকাবিলা বিশেষ করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঢাকা-দিল্লি বিদ্যমান সহযোগিতা আরো বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হবে। সেই আলোচনার ধারাবাহিকতায় দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগে চুক্তি সই হবে।
সূত্র মতে, দুই দেশ গত এক দশক ধরেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জোর দিয়ে আসছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দুই দেশই সমন্বিত ভাবে কাজ করে চলেছে। রাজনাথ সিংহের এবারের সফরে এ সহযোগিতাকে আরো টেকসই করতে এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।
সূত্র মতে, তরুণ সমাজ সব সময় জঙ্গিদের টার্গেট হয়ে থাকে। তরুণদের মধ্য থেকেই জঙ্গিরা কর্মী রিক্রুট করে চলেছে। সে কারণে দুই দেশই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তরুণদের সচেতন করতে চায়। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তরুণদের সচেতন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার থেকে ইতিমধ্যেই নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেসব উদ্যোগ জানার বিষয়ে ভারতের আগ্রহও কম নয়। দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় থাকছে।
এছাড়া দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে উভয় পক্ষ আলোচনার প্রস্তুতি নিয়েছে। যদিও সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যার হার খানিক কমেছে। তবে সীমান্তে সন্ত্রাসী ও চোরাচালান কার্যক্রম অব্যাহত রয়ে গেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে উভয়পক্ষেরই। দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বিষয়টিতে জোর দেয়া হচ্ছে। জাল রুপির প্রতিরোধে ভারত বাংলাদেশের কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে এমন ধারণা করে এক কর্মকর্তা বলেন- বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় জাল রুপি যাচ্ছে বলে দিল্লি দাবি করে আসছে। গত বছর সীমান্তে প্রায় ৬৯ লাখ ভারতীয় জাল রুপি ধরা পড়েছে। সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারিরা এই জাল জালিয়াতির কারবারে জড়িত বলে প্রতিবেশী দেশটির দাবি। এছাড়া ভারতীয় জাল টাকা তৈরিতে তৃতীয় একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধন রয়েছে বলেও মনে করে ভারত।
নতুন ভিসা সেন্টার উদ্বোধন: ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিন রাজনাথ সিং আগামী ১৪ই জুলাই রাজধানীর বারিধারায় যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। এই ভিসা আবেদনকেন্দ্রে কোনো ধরনের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই ভিসা আবেদন জমা নেয়া হবে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি আইভ্যাক সেন্টারে ভারতীয় ভিসা আবেদন জমা নেয়া হয়ে থাকে। তবে যমুনা ফিউচার পার্কের নতুন ভিসা আবেদন সেন্টারই হবে সবচেয়ে বড় সেন্টার। এখানে প্রায় ৫০টি ভিসা আবেদন কাউন্টারও থাকবে। এছাড়া সাতশ’র বেশি ভিসাপ্রার্থী একসঙ্গে বসতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সেক্রেটারি (বিএম) বারজ রাজশর্মা, অতিরিক্ত সচিব একে মিসরা, যুগ্মসচিব সাতিনদিয়া গর্গসহ ১২ জন প্রতিনিধি ঢাকা আসছেন।