যশোরে পাঙাশ চাষে নতুন দৃষ্টান্ত চাঁচড়ার রবি

robiএম জামান কাকা: যশোরে পাঙাশ চাষে নতুন দৃষ্টান্ত চাঁচড়ার রবিউল ইসলাম রবি। এখন তার পুকুরে প্রায় ২০লাখ পাঙাশ পোনা। দ্রুত পোনা বাজারে ওঠার অপেক্ষায়। ফ্রেন্ডশীপ মৎস্য খামারের এই মালিক পুরষ্কারের লোভে মাছ চাষ করেনা। ছোট থেকে প্রথমে পিতা এর পর বড় ভাই এর কাছে দীক্ষা নিয়ে এখন সে পরিপূর্ন মাছ চাষী। তার পুকুরে যেমন পাঙাশ পোনা আছে তেমনি আছে ভিয়েতনামের কৈ। অন্যান্য পুকুরে থাকা রুই পোনা চলতি সপ্তাহে পোনা বাজারে উঠবে। এছাড়া রয়েছে জাপানী কার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার ও ব্লাক কার্প পোনা মাছ।

সদর উপজেলার কুয়াদা পাথালিয়ায় তার ২৯বিঘা আয়তনের দিঘীতে বর্তমানে ১২ লাখ পাঙাশ পোনা মজুদ রয়েছে। ১০ কেজিতে এক লাখ রেনু হিসেবে ছাড়ার পরে আগামী কয়েকদিন পর তা বাজারে তোলা হবে বিক্রির জন্য। তার আশা ভালো দাম পাওয়া যাবে। তিনজন সহকারী কে সাথে নিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে রবি বড় দিঘীতে পাঙাশ পোনা অতি যত্নে বড় করছেন। সদর উপজেলার মালঞ্চী গ্রামের মাঠে মোবারকের পুকুরের আয়তন পাঁচ বিঘা। সেখানে তার মজুদ চার লাখ পাঙাশ পোনা। ২০/২২ দিন আগে পাঙাশের রেনু ছাড়া হয়। ছাড়ার সময় প্রতি লাখে রেনু ছিল ৮/১০ কেজি। রবিউল ইসলাম রবি আশা করছেন চলতি চালানে পাঙাশ পোনা বিক্রির টাকা দাড়াতে পারে আট লাখ টাকা। আগামী চার চালান পাঙাশ পোনা চাষ করে তিনি পুকুর গুলোতে পোনা মজুদ করে বাজারে মাছে সাইজ করবেন।

রবিউল ইসলাম রবি বললেন, আট মাইল দিঘীতে পাঙাশের পাশাপাশি প্রায় তিন মন সিলভার কার্প পোনা রয়েছে। এখন ১০পিচে এক কেজি মাপের হবে এই পোনা। ২০পিচে এক কেজি মাপের রুই পোনার মজুদ আছে তিন মন। আট পিচে এক কেজি মাপের কাতলা আছে দুই মন। ২০পিচে কেজি মাপের মৃগেল পোনার পরিমান হবে দুই মন। কুয়াদার তিনটি পুকুরে মাছ চাষে রবির দুইজন সহকারী আছে মান নার্সিয়ের জন্য। দুজনের নাম এক আর তা হচ্ছে হাসান। বড় হাসান ও ছোট হাসানের বেতনও এক। এদের মাসিক ৭০০০ টাকা হারে বেতন দিতে হয়। এখানে একজন নাইট গার্ড আছে তার নাম গোলাম মোস্তফা।

কুয়াদায় আরো দুটি পুকুর লীজ হিসেবে রবি মাছ চাষ করে। হাসানের বাড়ির পাশে এক বিঘা আয়তনের পুকুরে ব্লাক কার্প পোনা মজুদ আছে ৫০০০। প্রতি কেজিতে ১০০ পিচ পোনা মাপ হবে। এক বিঘা আয়তনের অপর পুকুরটি মোস্তফার পুকুর হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে জাপানী কার্প, রুই, কাতলা ও মৃগেল পোনা যার পরিমান দাড়াবে ১০মন।

যশোর মেডিকেল কলেজের পশ্চিমে তিন বিঘা আয়তনের পুকুরে ১৩ কেজি সিলভার কার্প ধানী বা রেনু পোনা ছাড়া হয়েছে। আশা রয়েছে ৫০ লাখ ধানী সেখানে মজুদ রয়েছে। পাশে আর একটি পুকুরের আয়তন দুই বিঘা দুই কাঠা যা রিতা বাবুর পুকুর হিসেবে পরিচিত। এই পুকুরে মজুদ আছে ভিয়েতনামী কৈ। ১,৪০,০০০ পোনা ছাড়া যা নার্সি হচ্ছে। প্রতি কেজিতে এখন ১০০পিচ দাড়াবে কৈ পোনা। এক মাস আগে এই রেনু ছাড়া হয়েছে। এক মাসের কিছু বেশি সময় পরে এই পোনা বাজার জাতে তার ইচছ। জানালেন সে কথা। একই মাঠে প্রেস ক্লাব সভাপতি জাহিদ টুকুন সাহেবের পুকুরটির আয়তন ১৬ কাঠা। গত ১০দিন আগে সেখানে তিন কেজি রুই রেনু বা ডিম ছাড়া হয়েছে। সংখ্যায় যা দাড়াবে ১২ লাখ।

ফেন্ডশীপ মৎস্য খামারের প্রোপাইটর রবিউল ইসলাম রবি জানালেন মালঞ্চী মাঠে মোবারকের পুকুরের আয়তন পাঁচ বিঘা। যেখানে রয়েছে চার লাখ পাঙাশ। যা আগেই বলা হয়েছে। মেডিকেল কলেজ মাঠে তার পুকুর পরিচর্যাকারী হচ্ছেন শাহাজাহান ও সবুজ। এদেরকে মাসে নয় হাজার টাকা বেতন দিতে হয়।

এছাড়া মালঞ্চীর পুকুরে তার সহকারী শাহাজাহান কবীর তাকে দিতে হয় মাসে সাত হাজার টাকা বেতন। মাছ নার্সিয়ের জন্য তার ইনকামট্যাক্স, ট্রেডলাইসেন্স হালনাগাদ রয়েছে। পরিবারে তার স্ত্রী রত্না ইসলাম শহরের ষষ্টী তলার মেয়ে। তার জমজ দুই কন্যার নাম রোজ ও রোজার বয়স মাত্র আট বছর তারা সরকারি মোমিন গার্লস স্কুলে পড়াশুনা করে। আর রবির পিতা আরশাদ আলী ভূইয়া ও মাতা ফুলমতি বিবি দুজনেই জীবিত আছেন। ২৭/০৭/১৯৮০ সালে তার জন্ম।

তিনি আরো জানান, মাছ চাষী হিসেবে তার গর্ব বোধ হয়। তার ভবিষ্যত ইচ্ছা ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ থেকে ১০০ বিঘা আয়তনের নিজস্ব মাছের ঘের স্থাপনের। ৩০বছর ধরে শিশু অবস্থা থেকে তিনি মাছ চাষের সাথে সম্পৃক্ত। তার চাষে চোর-সন্ত্রাস-চাঁদা সমস্যা নেই। ২০০১ সালে তিনি জেলা পর্যায়ে রুই কার্প জাতীয় মাছ চাষের জন্য পুরষ্কার অর্জন করেছিলেন। তবে পুরষ্কার বড় কথা নয়। তার কাছে এটাই বড় যে পিতা, বড় ভাই ও নিজে দুই প্রজন্মে মাছ চাষ করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন।