চৌগাছায় ঋণের টাকা পরিশোধের পরেও কারাগারে কৃষক

চৌগাছা প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় আর্স বাংলাদেশ নামে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করার পরেও এনজিও কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে কারাগারে যেতে হয়েছে সাজেদুর রহমান নামে এক কৃষককে। আদালত কর্তৃক এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে মঙ্গলবার তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে চৌগাছা থানার পুুলিশ। ওই কৃষক ঋণ পরিশোধ করলেও এনজিও কর্মকর্তারা বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করায় এই অবস্থা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের হিজলী গ্রামের মৃত মোবাশ্বের আলীর ছেলে সাজেদুর রহমান (৫৫) গ্রামে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে আর্স বাংলাদেশ নামে একটি এনজিওর চৌগাছা শাখা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। যা এক বছরে তাকে ৮৯ হাজার ৬শ’ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ঋণ নেয়ার সময় তার কাছ থেকে ইসলামী ব্যাংক চৌগাছা শাখার ৬৫ হাজার টাকার একটি চেক নিয়ে রাখে এনজিও কর্মকর্তারা। কৃষক সাজেদুর রহমান নির্ধারিত সময়ে কয়েক কিস্তিতে ঋণের ৪৬ হাজার ৬শ’ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ৪৩ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আর্স বাংলাদেশ চৌগাছা শাখার কর্মকর্তাদের নিকট থেকে সময় নেন।

তবে তিনি সে সময়ের মধ্যেও টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আর্স বাংলাদেশ নামক এনজিওটি ২০১৬ সালে কৃষক সাজেদুর রহমানের নামে যশোরের আদালতে একটি চেক ডিজ-অনার মামলা করে। যার নং এসসি/৮২৮/১৬। মামলা হওয়ায় সাজেদুর ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর তার কাছে পাওনা ৪৩ হাজার টাকা এনজিও অফিসে পরিশোধ করেন। টাকা পরিশোধের রশিদ নং ৯৪৭২, তারিখ-২৯-১০-২০১৭।

টাকা পরিশোধ করার পরও এনজিও কর্তৃপক্ষ মামলা প্রত্যাহার না করায় বা আদালতকে অবগত না করানোর কারণে ৯ নভেম্বর ২০১৭ আদালত সাজেদুর রহমানকে এক বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। আদালতে সাজা হওয়ার পরও বিষয়টি কৃষক সাজেদুর রহমান জানতেন না। এনজিও কর্তৃপক্ষও তাকে বিষয়টি জানায়নি। ফলে মামলায় আদালতের রায়ের প্রায় ৯ মাস পর কৃষক সাজেদুর রহমানের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে যায়।

আদালতের এই ওয়ারেন্ট চৌগাছা থানায় পৌঁছালে ১৬ জুলাই রাতে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অনিল মুখার্জী সাজেদুর রহমানকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করেন। এরপর মঙ্গলবার তাকে জেল হাজাতে পাঠানো হয়। এসআই অনিল মুখার্জী তাকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাজেদুর রহমানের ছোট পুত্র বাবুল আক্তার বলেন, পুলিশ বাবাকে আটকের পর আমরা জানতে পারি আর্স বাংলাদেশের ঋণের চেক-ডিজঅনার মামলায় বাবার এক বছরের জেল হয়েছে। আমরা মঙ্গলবার সকালে আর্স বাংলাদেশের চৌগাছা অফিসে দু’বার গিয়েও অফিস বন্ধ পাই। পরে এনজিও কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে আমরা আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করলে জামিনের চেষ্টা করেও জামিন মেলেনি। সাজেদুরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল গফুরের বরাত দিয়ে তার পুত্র বাবুল আক্তার আরো জানিয়েছেন, আদালতে ৩২ হাজার পাঁচশত টাকা জমা দিয়ে তার জামিন চাইতে হবে।

সাজেদুর রহমানের পরিবারের অভিযোগ, ঋণের টাকা পরিশোধের পরও এনজিও কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় সহজ সরল সাজেদুরকে জেলে যেতে হয়েছে।

এবিষয়ে আর্স বাংলাদেশ চৌগাছা শাখার ব্যবস্থাপক মিল্টন হোসেন জানান, টাকা পরিশোধের আগেই মামলার রায় হয়ে গেছে। তাই আমাদের কিছু করার ছিলনা। সাজেদুর রহমানের বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন তার দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, টাকা পরিশোধের পরে মামলার রায় হয়েছে। তাদের গাফলতিতে আজ আমার পিতাকে জেলে যেতে হলো।