চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যানের হুমকিতে দুই শতাধিক জেলে পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে

স্টাফ রিপোর্টার : চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের ম্যানেজার ইমদাদুল হক দুর্নীতির মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে বাঁওড়টি ৭০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এতে জেলেদের প্রাপ্য ৪০ শতাংশ মালিকানাবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই শঙ্কার বিষয়টি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয় জেলেরা। বিষয়টি ভালভাবে নেননি চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান।

তিনি পরবর্তীতে জেলেদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছেন। সরকারি বাঁওড়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পাড়ের দুই শতাধিক জেলে পরিবার। মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছে বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড় পাড়ের মৎস্যজীবীরা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের ম্যানেজার ইমদাদুল হক কতিপয় মৎস্যজীবী নামধারী লোকজনের কাছে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকায় বাঁওড়টি ইজারা দিতে চাচ্ছে। বাঁওড়টি লিজ দিলে ২ শতাধিক প্রকৃত মৎস্যজীবী জলে নামতে পারবে না। একারণে বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান করি। এই স্মারকলিপি প্রদানের পর থেকে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গত রোববার চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান ধুলিয়ানি থেকে ফুটবল খেলা দেখে চৌগাছা ফেরার পথে বাঁওড়ের পাশের গ্রাম ফতেপুর মালোপাড়ায় নিজের গাড়ি থেকে নামেন। এরপর সেখানে দাঁড়িয়ে যে সকল মৎস্যজীবী ডিসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তাদের ডাকতে বলেন।

স্থানীয়রা আমাদের ডেকে নিয়ে আসলে, এসএম হাবিবুর রহমান আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘এই বাঁওড়ে আগামী মাসে ৬০ লক্ষ টাকার মাছ ছাড়া হবে। তোমরা কেউ বাঁওড়ে মাছ ধরতে যাবা না। যারা বাঁওড়ে নামবে, তাদের লাশ ভেসে থাকবে।’ তার এ কথার প্রতিবাদে মৎস্যজীবীরা বিক্ষুব্ধ হলে তিনি মৎস্যজীবী মনোরঞ্জনের গালে চড় মারেন। এসময় অন্য মৎস্যজীবীরা উত্তেজিত হয়ে এসএম হাবিবকে ঘিরে ধরলে গানম্যান সিংগঝুলি ইউনিয়নের মেম্বর খন্দকার বাবুল লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে ফাঁকাগুলি ছোঁড়েন। এরপর তাকে উদ্ধার করে চৌগাছায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, এ বছর বাঁওড়টির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। কিন্তু বাঁওড় ম্যানেজার ৭০ লাখ টাকায় ওই প্রভাবশালী মহলকে (উপজেলা চেয়ারম্যান) ইজারা দিচ্ছেন। এই ইজারা সম্পন্ন হলে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা জলে নামতে পারবে না। প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা এলাকায় বেপরোয়া। দুই শতাধিক জেলে পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বাঁওড়ের অনিয়ম বন্ধের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে জেলেদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বনাথ বসু, বিকাশ হালদার, মনু হালদারসহ শতাধিক জেলে পরিবারের সদস্য।

বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের ম্যানেজার এমদাদুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।

চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান মোবাইল ফোন রিসিভি করেননি। একাধিকবার তার মোবাইল ফোন ব্যস্ত ছিল। এজন্য বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আওয়াল বলেন, মৎস্যজীবীদের কয়েকজন আজ (মঙ্গলবার) আমার সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা বলেছে। আমি তাদের কথা শুনছি। তাদের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।