ঢাকা: দুই বাসচালকের রেষারেষিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনার বিচার দাবি করে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে সহপাঠীরা।
সোমবার সকালে দুই বাসচালকের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজেসহ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হোটেল র্যাডিসন ব্লুর সামনের রাস্তায় নেমে আসে।
তারা অভিযোগ করেছে, ঘটনার প্রায় দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এবং বাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সকাল ১০টার দিকে কলেজের সামনে মানববন্ধন করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে বুঝিয়ে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
ঘটনাস্থলে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই ছাত্রী বলে, গতকাল যে ঘটনাটি আমাদের দুই সহপাঠীর সঙ্গে হয়েছে, কাল সেটি তো আমাদের সঙ্গেও হতে পারে। আমরা এর বিচার চাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আমাদের তো এখন ক্লাসে থাকার কথা। আমরা এখানে এসেছি বিচার চাইতে।
শিক্ষার্থীদের হাতে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড, ফ্যাস্টুন রয়েছে। এসবে লেখা রয়েছে ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘চলার পথটা যদি বিপজ্জনক হয় তাহলে দেশ সামনে এগোবে কী করে’, ‘বাস নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ড্রাইভিং বন্ধ করুন’, ‘ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা’ ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের সহকারী উপকমিশনার (এডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আজ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের সামনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের শেষ প্রান্তে দুই বাসচালকের রেষারেষিতে প্রাণ হারায় দুই কলেজছাত্র। আরো কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের পাশের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তারা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান জোনের এডিসি আবদুল আহাদ ও ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের উপকমিশনার প্রবীর কুমার দাস জানান, মিরপুর-উত্তরা রোডের জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস মিরপুর থেকে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে আসছিল। এ সময় ফ্লাইওভারের শেষ দিকে, রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল একদল শিক্ষার্থী। বাসটি ফ্লাইওভার থেকে নেমেই দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। আহত হয় আরো বেশ কয়েকজন।
খবর পেয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এমইএইচ বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে খিলক্ষেত পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে দুই পাশের সড়কে শতাধিক যানবাহনের গ্লাস ভাঙচুর করে এবং জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।