স্পোর্টস ডেস্ক: বিকেএমই এর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তার এক আত্মীয় থাকেন ওয়াশিংটনে। তাদের জরুরি আবদার বাংলাদেশ জাতীয় দলের ১৫টি জার্সি পাঠাতে হবে। ফ্লোরিডাতে যাবেন বাংলাদেশ দলের খেলা দেখতে। আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলবে ক্রিকেট। সেখানে জাতীয় দলের জার্সি পরে না গেলে যেন অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। মোহাম্মদ হাতেমও বাংলাদেশ দলের জার্সি যেখান থেকে তৈরি করা হয় সেখানে যোগাযোগ করে ডিএইচএলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই একটি ঘটনা দিয়ে বুঝা যায় আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা প্রবাসীদের মাঝে কতটা সাড়া ফেলেছে।
বাংলাদেশে থাকা অবস্থায়ই টের পেয়েছিলাম তামিম-সাকিব-মুশফিকদের খেলা দেখা নিয়ে প্রবাসীদের মনের অবস্থা। বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ হলেই তারা এ সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন। নিউইয়র্কে আসার পর তা আরো বেশি করে উপলব্ধি করা গেছে। আমেরিকার ব্যস্ত জীবনের মাঝে কেউ কেউ এমনই প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দল আসবে কি না? তারা অনেকেই এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। এই থাকাটা ছিল স্বাভাবিক। কারণ এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্রীড়া দল আমেরিকাতে এসেছে। কিন্তু জাতীয় দল ছিল না। সেখানে ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আকাশচুম্বী চাহিদা। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে পরিচয় দেয়ার নতুন ঠিকানা। প্রবাসীদের জন্য লাল-সবুজের গর্বিত পতাকা। এ রকম একটি দল সত্যি সত্যি আসা নিয়ে তাদের অনেকেরই সংশয় ছিল। যেখানে আবার আমেরিকাতে ক্রিকেট খেলার নাম গন্ধ নেই বললেই চলে। আইসিসির সহযোগী সদস্য। এখনো পড়ে আছে তলানির দিকে। প্রবাসীদের অনেকেই আবার জানেন না আমেরিকাও যে ক্রিকেট খেলে!
বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে- এ নিয়েও ছিল কারো কারো প্রশ্ন? কেউ কেউ প্রতিপক্ষ হিসেবে আমেরিকাকেও মনে করেছেন! আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ জানার পরও তাদের মনে প্রশ্ন কেন তাদের সাথে খেলা? কেন আমেরিকাতে (এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য ইমিগ্রেশনের সময় এই প্রতিবেদককেও দিতে হয়েছে)? এসব বিষয়ে প্রবাসীদের অনেকেই সন্দিহান ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের আসা নিয়ে। সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে অবশ্য বিষয়টি তাদের কাছে স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে উঠে। যারা আগে থেকেই জানতেন তারা খেলা দেখার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। কিন্তু পরে যারা নিশ্চিত হয়েছেন তাদের অনেকেই আবার সময় বের করতে পারছেন না। যারা সময় বের করতে পেরেছেন তারা খেলার টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারলেও বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। এমনিতেই শনি ও রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়াতে বিমানের টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়। এর মাঝে আবার বাংলাদেশের খেলা হওয়াতে তৈরি হয়েছে বাড়তি চাহিদা। যে কারণে অনেকেরই বিমানের টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে আফসোস থাকলেও আমেরিকার মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলতে আসছে এ নিয়ে তাদের আনন্দের সীমা নেই। গর্বে বুকটা ভরে উঠছে। বিদেশি বন্ধুদের বুক ফুলিয়ে বলতে পারছেন বাংলাদেশ দলকে নিয়ে। যা তারা এতদিন শুধুই গল্প করে এসেছেন। এবার সামনা সামনি প্রমাণ।
নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙ্গালিদের বসবাস বেশি। সেখাকার বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকা ব্রোঞ্জ, কুইন্স, জ্যামাইকাতে শত ব্যস্ততার মাঝেও আলোচনা শুধুই বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের মানবকণ্ঠ পত্রিকা থেকে ম্যাচ দুটি কভার করতে এসেছি জানার পর বিষয়টি আরো বেশি করে টের পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ-আমেরিকা কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি মেন্বার আব্দুল হাশিম হাসনু এমনিতেই খেলা পাগল। দেশে থাকাকালীন খেলতেন ফুটবল। প্রবাসে অর্জিত কস্টের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন।
বাংলাদেশ দলের আমেরিকার মাটিতে খেলা নিয়ে তার আনন্দের সীমা নেই। তিনি বলেন, ‘খুবই আনন্দের বিষয়। দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন সবাই। ব্যস্ততার কারণে অনেকেরই ইচ্ছে থাকার পরও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিউইয়র্ক হলে খুবই ভালো হতো। ক্রিকেটই একমাত্র খেলা যেখানে বিশ্বের বড় বড় দেশের সাথে বাংলাদেশ খেলে থাকে। বাংলাদেশ দলও এখন নিজেরাই অনেক শক্তিশালী। অনেক অনেক শক্তিশালী দেশকেই তারা হারাচ্ছে। আমাদের সম্মান অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে।’ নিউইয়র্ক কমিউনিটির পরিচিত মুখ রেজাউল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক আনন্দ আর গর্বের। ক্রিকেট দল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলতে যায়। কিন্তু কখনোই আমেরিকাতে আসেনি। আমরা চাই এই আসা যেন অব্যাহত থাকে। আগামীতেও আসে।’ কামরুল হাসান নিজে খেলেন ক্রিকেট। সাকিবের অসম্ভব ভক্ত। সাকিবের নামের সাথে মিল থাকায় তার জার্সি নম্বরও ৭৫। ইচ্ছে থাকার পরও তিনি মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারছেন না তার নিজের খেলা থাকায়। ইমদাদুল ইসলাম শাহীনের কাছে এটি একটি গ্রেট অপর্চুনিটি।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই কাজ বাদ দিয়ে খেলা দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেখানেই বাংলাদেশ দলের খেলা হোক না কেন সবাই কম বেশি খবরা-খবর রাখতেন। সেখানে আমেরিকাতে বাংলাদেশ দলের খেলা আমাদের সবার জন্য অনেক গ্রেট অপর্চুনিটি। ভালো খেলে বাংলাদেশ দল আমাদের মাথা আরো উঁচু করে যাবে।’
আলমগীর হোসেন একসময় বাংলাদেশে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করতেন একটি টিভি চ্যানেলে। বর্তমানে আমেরিকাতেই বসত। এখানে এসে অন্য কাজ করার পাশাপাশি ক্রীড়া সাংবাদিকতা করছেন। এক্রিডিটেশন কার্ডও অনুমোদন হয়েছে। তার কাছে অনুভূতি অন্য রকম বেশি। খেলার জন্য তিন দিনের জন্য কর্মস্থলকে ছুটি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর মাঠে বসে সাকিব-তামিমদের খেলা দেখব। ভাবতেই এক্সাইটেড হয়ে পড়ছি।’ পাশাপাশি তিনি বিসিবির কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নতুন ক্রিকেটার দলে আনার ব্যাপারে আরো বেশি করে গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, সাকিব-মাশরাফি-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ প্রায় কাছাকাছি সময়ে অবসর নেবে। এরপর বিরাট শূন্যতা তৈরি হবে। কিন্তু তাদের জায়গা পূরণ করার মতো নতুনরা উঠে আসছে না। এ দিকে যেন বেশি করে বিসিবির পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেয়া হয়।’