যশোরের খাজুরা এলাকায় ব্যাঙের ছাতা গড়ে উঠেছে বেসরকারী এনজিও (সমিতি)। এনজিওগুলোর ঋণদান, সুদ আদায়ের নির্মমতা, সুদের উচ্চহার এবং ঋণ শোধে অক্ষমতার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে আত্মহত্যার মত নির্মম ঘটনা। যার কারণে এই এলাকায় দিন দিন মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবুও এনজিও গুলোর প্রতাপ একটুও কমেনি।
এনজিও কর্মীদের প্ররোচনায় সুখী স্বচ্ছল জীবনের আশায় কিংবা ব্যবসা ও চাষাবাদ কাজের জন্য প্রথমে অল্প পরিমাণ ঋন নেয় সাধারণ মানুষ। এরপর কিস্তি চলমান থাকার অবস্থায়ও অনেকে বিভিন্ন অসুবিধায় পড়ে ভিন্ন ভিন্ন এনজিও থেকে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিক ঋণ নেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাজুরা বাজারে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩২টি এনজিওর শাখা রয়েছে। একজন ব্যক্তির একাধিক এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার নজির রয়েছে। ফলে সপ্তাহের ছয় দিনই কোন না কোন এনজিও কিস্তি থাকে। যার কারণে কারও কারও দিনে রান্না না হলেও কিস্তির টাকা দিতেই হয়।
সাবলম্বী হওয়ার আশায় ঋণ নিয়ে কেউ একবার এই ঋণের জালে জড়ালে শত চেষ্টা করলেও আর বের হতে পারে না। তাই এক এনজিও কিস্তি শেষ করতে অন্য এনজিও থেকে ঋণ নেয়।
অথচ এনজিও নীতিমালায় রয়েছে, একজন ব্যক্তি একের অধিক এনজিও থেকে ঋণ নিতে পারবে না।
এই জালে জড়িয়ে খাজুরা এলাকায় লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের সব্জি ব্যবসায়ী আরশাদের স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৩৫) প্রায় ৬ মাস আগে কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এবং এনজিও কর্মীর অশোভন আচরণে অতিষ্ট হয়ে সম্মান বাঁচাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
একই কারণে চন্ডিপুর গ্রামের জুলফিক্কার আলী (৩৬) প্রায় ২ মাস আগে বিষপান করে আত্মহত্যা করে।
এছাড়া গত শুক্রবার কোদালিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার ভ্যান চালক হারুন সরদারের স্ত্রী রেশমা বেগম (৪০) এনজিও কর্মীদের গালমন্দ সহ্য না করতে পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
ভ্যান চালক হারুন সরদার বলেন, তার স্ত্রী খাজুরার ৯টি এনজিও থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে। ব্রাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, শক্তি ফাউন্ডেশন, সিএস, জাগরনী চক্র, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নাম উল্লেখ করেন। এর মধ্যে একই এনজিও ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ৪০ ও ২০ হাজার টাকার দুইটি ঋণ উত্তোলন করেছে। ৪০ হাজার টাকার ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি বৃহস্পতিবার ১ হাজার টাকা এবং গরু মোটাতাজকরণ ঋণের ২০ হাজারের লাভের টাকা মাসিক ৪৪০ টাকা দিতে হতো। এছাড়া অন্যান্য সব এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি সপ্তাহে প্রায় ৭ হাজার টাকা।
ঋণ প্রদানের ব্যাপারে এই এলাকার এনজিও গুলোর শাখা ম্যানেজারদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এনজিওর গ্রাম ভিত্তিক সমিতি দলের সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে মূলত ঋণ প্রদান করা হয়। তবে নতুন কোন সদস্যকে ঋণ প্রদান করার ক্ষেত্রে ঐ সদস্যের অন্য কোন এনজিওতে ঋণ নেওয়া আছে কিনা তা সেভাবে খতিয়ে দেখা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মী বলেন, এনজিও গুলোর প্রতি মাসে ঋণ প্রদানের জন্য নির্ধারিত টার্গেট দেওয়া থাকে। আর এই টার্গেট পূরণ করতে গিয়ে বেশির ভাগ সময় তেমন যাচাই বাছাই ছাড়ায় ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
এদিকে প্রতিনিয়ত এমন আত্মহত্যার মত নির্মম ঘটনা ঘটায় অত্র এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এনজিও গুলো যে সকল সমাজ কল্যাণ মূলক কর্মকান্ড করে থাকে তা চোখে পড়ার মত না। তারা শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
এলাকাবাসীর দাবী, এনজিও গুলো ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের উদাসীনতা দূর করে সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে ঋণ প্রদান করলে এমন নির্মম ঘটনা আর ঘটবে না। এব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এনজিও গুলোর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।