মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ১৬৬১ জন সদস্যের পরিবারকে সম্মাননা দেবে সরকার। মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে এ সম্মাননা দেয়া হবে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। এখন চলছে ক্রেস্ট সংগ্রহ, সম্মাননাপত্র, ফোল্ডার ও ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজ। ক্রেস্ট সংগ্রহের কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সম্মাননাসহ অন্যান্য জিনিসগুলো সংগ্রহ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ক্রেস্ট সংগ্রহের জন্য এরই মধ্যে তিন দফা দরপত্র আহ্বান করেও কিনতে পারেনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।
আজ বেলা সাড়ে বারোটায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির পরিবর্তে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ক্রেস্ট সংগ্রহের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উঠবে। অনুমোদন মিললে সরাসরি ক্রেস্ট সংগ্রহ করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত ১৩ই আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ১৬৬১ জন শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দেয়ার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ই মে এ কমিটির সভায় সম্মাননা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর একই বছরের ৩০শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ক্রেস্ট এবং অন্যান্য সামগ্রী কীভাবে কেনা হবে এনিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৮শে ডিসেম্বর রুপার তৈরি ১৭০০ পিস ক্রেস্ট কিনতে দুটি জাতীয় দৈনিকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুইটি দরপত্র পাওয়া যায়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দুইটি দরপত্রকেই নন-রেসপনসিভ করে এবং পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ বছরের ৫ই মার্চ দুইটি পত্রিকায় পুনঃ দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করা হয়। এ সময়ও দুইটি দরপত্র পাওয়া যায়। দরপত্র দুটিকে নন-রেসপনসিভ ঘোষণা করা হয় এবং পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করা হয়। প্রথমবার অংশ নেয়া দুটি প্রতিষ্ঠান এ সময়ও অংশ নেয়। ১৭ই এপ্রিল তৃতীয় দফা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এ সময় দাখিলকারী দুটি দরপত্রের মধ্যে এশিয়াটিক ইভেন্ট মার্কেটিং নামের প্রতিষ্ঠানকে রেসপনসিভ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তাদের দাম প্রাক্কলিত দামের চেয়ে বেশি হওয়ায় মূল্যায়ন কমিটি তাদের দরপত্রটি সুপারিশ করেনি। এ সময়ও চতুর্থ দফা দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করা হয়। তবে সময় না থাকায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির প্রস্তাব করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সারসংক্ষেপ ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত জন শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দেয়। ওই সময় সম্মাননা ক্রেস্ট (রুপার তৈরি), সম্মাননাপত্র, ফোল্ডার, ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রীর নমুনা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে চূড়ান্ত করা হয়। এগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত জিনিসগুলোই তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে ক্রেস্ট তৈরি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য সাবধানতার সঙ্গে ক্রেস্ট কিনছে তারা।