জাতিসংঘ প্রতিবেদনের প্রশংসায় বাংলাদেশ

রাখাইনে রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ হোতা হিসেবে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের দায়ী করে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের প্রতিবেদনের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বুধবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বাস করে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের হামলার পর এটাই সবচেয়ে সমন্বিত, তথ্যবহুল এবং সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন।”

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “মিয়ানমার যে এটা প্রত্যাখ্যান করবে, তা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এতে কিছু যায় আসে না। পুরো বিশ্ব জানে, বাংলাদেশ প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে খুব ধৈর্যের সঙ্গে এই সঙ্কট মোকাবেলা করেছে।”

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের এক বছরের মাথায় গত ২৭ অগাস্ট জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে। আর মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির বেসামরিক সরকার ‘বিদ্বেষমূলক প্রচারকে উসকে’ দিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ ‘আলামত ধ্বংস’ করে এবং সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা না করে সেই নৃশংসতায় ‘ভূমিকা’ রেখেছে।

আইন প্রয়োগের নামে ভয়ঙ্কর ওই অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে।

পরে ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হাতোইকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে বলা হয়, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠন করা হয়েছিল হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে। মিয়ানমার সরকার যে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের রেজুলেশনের সঙ্গে নেই, তা সব সময়ই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।

“এ কারণে আমরা ওই প্রক্রিয়ায় অংশ নিইনি। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে আমরা মিয়ানমারে ঢুকতে দিইনি। তাই হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের কোনো রেজুলেশনের সঙ্গে আমরা একমত নই, তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্যও নয়।”

মিয়ানমার বাহিনীর নৃশংসতার মুখে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনের অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আসছে।

রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরাতে এই সঙ্কটের তিনটি বিষয়কে বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে ব্রিফিংয়ে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এগুলো হল- মানবিক দৃষ্টিকোণ, প্রত্যাবাসন এবং রাখাইনে ফরাধ সঘটনের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতা।

বিমসটেক সম্মেলন উপলক্ষে ৩০-৩১ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেপাল সফরের বিস্তারিত জানাতে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিয়ানমারও আছে এই জোটে।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট বিমসটেকের অগ্রগতিতে বাধা হবে না, কারণ এটি শুধুই অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতার জোট।

“বাংলাদেশ সবসময়ই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে, শুধু একটি সঙ্কটে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

“বিমসটেক সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে গ্রিড সংযোগের বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারকে সই করতে মিয়ানমারসহ সবগুলো দেশ সম্মত হয়েছে।”

বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমারের প্রতিনিধত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট।