‘উত্তরপাড়ার’ সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই: ড. কামাল

অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারার যে অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে করেছেন তা নাকচ করে দিয়েছেন নবগঠিত জোট যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ‘উত্তরপাড়ার’ (ক্যান্টনমেন্ট) সঙ্গে সম্পর্কের যে ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রী করেছেন সেটাও নাকচ করে দিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেছেন, তার কোনোকালেই এমন কোনো সম্পর্ক ছিল না।

সোমবার বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ড. কামাল এসব কথা বলেন।

নেপাল সফর সম্পর্কে জানাতে রবিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন রাজনৈতিক জোট এবং তাদের নেতাদের নিয়ে অনেকটা ঠাট্টা-তামাশা করেন।

জোটের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন গরম বক্তৃতা দেবেন, তখন ধরে নেবেন তার প্লেন রেডি।

তার এবং তাদের জোট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্যকে তিনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, এসব নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

তবে শেখ হাসিনা যে নতুন জোটকে স্বাগত জানিয়েছেন সেটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা।

জনগণের কাছে নতুন এই জোটের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে যে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন সে বিষয়ে কামাল বলেন, ‘আমরা তো ওনার সমর্থনে কিছু করিনি, স্বাধীনভাবে করেছি, তাই এবিষয়ে তো তিনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘মানুষ এটা ভালোভাবেই জানে যে ২০০৮ সালে আমরা কী করেছিলাম। আমাদের জোটে যারা আছেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে তাদের কী অবদান সেটা সবাই জানেন।’

‘ভোটার তালিকা বাতিল করার জন্যে আমি মামলা করেছিলাম। তখন এক কোটি ৪৪ লাখ ভোট বাতিল করা হলো। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করালাম। ইয়াজউদ্দিন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ থেকে সরালাম। তখন আমাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হলো। এসব অবদানের কথা তো অনস্বীকার্য।’

যুক্তফ্রন্টের এই নেতা বলেন, তাদের নতুন জোট চাইছে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। বলেন, ‘যদি জনমত নেওয়া যায় তাহলে দেখবেন যে ১০০% সমর্থন এর পক্ষে আছে।’

ড. কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে গত চার/পাঁচ বছরে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে কিন্তু সেরকম কিছুই করা হয়নি। মনোনীত লোকজনদের নিয়ে সংসদ বানানো হয়েছে কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের নাম গন্ধ কেউ পায়নি।’

এটা করার জন্যে নতুন জোটের সেই শক্তি কি আছে- এই প্রশ্নের জবাবে ড. হোসেন বলেন, ‘আমাদের শক্তি শূন্য বলে ধরে নিচ্ছি কিন্তু জনগণের সেই শক্তি আছে। আমাদের কথাবার্তা তো জনগণের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। জনমত যাচাই করে দেখেন তারা পরিবর্তন চাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই জোটের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। তাদের নিয়ে ছড়াও কেটেছেন।

যুক্তফ্রন্টের নেতাদের ইঙ্গিত করে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশে কিছু মানুষ আছে যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন কিন্তু তারা অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেন। তারা উত্তর পাড়ার (ক্যান্টনমেন্ট) দিকে তাকিয়ে থাকেন- এই মন্তব্যের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, এই বক্তব্য তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।

শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আদৌ নির্বাচন হবে কি না যারা বলেন তারা হয়তো বসে আছেন…কোনো কিছু হলে সব উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। এটাই তো বাস্তবতা। যেমন আমার বাবাকে হত্যা করেছে। যিনি এই দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেলেন তাকে যারা খুন করতে পারে তো সেদেশে কী না হতে পারে!’

এর জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা যা করেছি সেটা তো গোপনে করিনি। আমি মামলা করে সব ভুয়া ভোটার বাতিল করলাম, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করলাম- এসব উত্তরপাড়ার কোনো ব্যাপার নয়। তাদের সাথে আমাদের কোনোদিন সম্পর্ক ছিল না।’

বিএনপির সাথে যুক্তফ্রন্টের কোনো রাজনৈতিক ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, এবিষয়ে বিএনপির সাথে তাদের কোনো কথা হয়নি। তবে এবিষয়ে নীতিগত ইস্যুতে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।