কঠোর নিরাপত্তায় কারাগারেই শুরু হচ্ছে খালেদার বিচার

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ আজ থেকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হবে। মামলার শুনানি ঘিরে কারাগারের আশপাশে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।

বুধবার এ কারাগারেই বসছে বিশেষ আদালত, শুরু হবে মামলার শুনানি।

সরেজমিন দেখা গেছে, পুরনো এ কারাগারটির দুদিকের সড়কেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যান চলাচল। বন্ধ রাখা হয়েছে আশপাশের দোকানপাটও।

এ ছাড়া যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও।

এ সড়ক দিয়ে যাওয়া প্রত্যেক পথচারীরই শরীর তল্লালি করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো রিকশাও প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না কারাগারের পাশের রাস্তায়।

মামলার শুনানির জন্য এ কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে। মঙ্গলবার বিকালে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করছে আইন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, ‘বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন মাঠে নির্মিত এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে। সে জন্য নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ জজ আদালত-৫ নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হল।

বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন বিশেষ মামলা নম্বর ১৮/২০১৭-এর বিচার কার্যক্রম পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নম্বর ৭-এর অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।’

৮ ফেব্রুয়ারি থেকে (প্রায় সাত মাস) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়া ওই কারাভবনের দোতলার একটি কক্ষে রয়েছেন। কারাগারে যাওয়ার পর থেকে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নির্ধারিত দিনগুলোতে তিনি আদালতে হাজিরা দেননি।

এ জন্য উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলছেন, এটি আইনের পরিপন্থী।

এর আগে ৭ আগস্ট এ মামলায় যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিনও খালেদা জিয়া কারাগার থেকে আদালতে হাজির হননি। তবে আদালত খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বর্ধিত করেছেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ সাত বছর কারাদণ্ড দাবি করে দুদক প্রসিকিউশন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। এর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।

খালেদা জিয়া ছাড়া মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। হারিছ চৌধুরী এখনও পলাতক আছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। অন্য দুজন জামিনে আছেন।

প্রসঙ্গত চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেকের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।