এরশাদের জোটে আস্থা নেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃত্বাধীন ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’-এ যোগ দিলেও বেশিরভাগ ধর্মভিত্তিক দলেরই আস্থা নেই জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি। এ প্রসঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের ভাষ্য, জাপা সংসদে বিরোধী দল হলেও দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ বিরোধী দলের নেতা নন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে রয়েছেন। মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন জাপার কয়েকজন নেতা। আর জাপার এমপিরা বিরোধী দলে থাকলে কথা বলেন সরকারি দলের সুরেই।এছাড়া এরশাদও ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এসব কারণেই তার প্রতি ইসলাম ধর্মভিত্তিক দলগুলো আস্থা রাখতে পারছে না।

এদিকে, এরশাদ ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ গঠনের ডাক দিলে গত ১১ আগস্ট শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এতে যোগ দেয়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাপার সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতাও করে দলটি। যদিও এই দলের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে জোটের কথা বলে আসছিলেন।

জাপা-সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জোট গঠনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। নিবন্ধনহীন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন জাপার নেতারা। জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়। এরশাদও বিভিন্ন সময়ে জোট গঠন করে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলেছেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরশাদ। সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একঘণ্টার বেশি সময় ধরে এ বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনি জোট, নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। এরশাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে ইসলাম ধর্মভিত্তিক দলগুলো। তারা এরশাদের ‘সম্মিলিত জাতীয় জোটে’ যোগ না দিয়ে নিজেদের মধ্যে পৃথক জোট গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে।

এরশাদের জোটে যোগ না দিয়ে ইতোমধ্যে ১৫টি সমমনা রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত হয়েছে নতুন জোট ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (আইডিএ)। এর নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি। এ জোটে রয়েছে, মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, নুরুল ইসলাম খানের গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, এম এ রশিদ প্রধানের বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, হাসরত খান ভাষানীর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (ভাষানী গ্রুপ), রুমা আলীর বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, মাওলানা শাহ মোস্তাকিম বিল্লাহ ছিদ্দিকীর বাংলাদেশ জমিয়তে দারুসসুন্নাহ, মাওলানা হারিছুল হকের বাংলাদেশ ইসলামী ডেমোক্রেটিক ফোরাম, হাকিম গোলাম মোস্তফার বাংলাদেশ গণ কাফেলা, মুফতি ফখরুল ইসলামের বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলন, কাজী মাসুদ আহমদের বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি, রেজাউল করিম চৌধুরীর বাংলাদেশ ইসলামী পেশাজীবী পরিষদ, মুফতি সৈয়দ মাহাদী হাসান বুলবুলের ইসলামী ইউনিয়ন বাংলাদেশ, খাজা মহিবুল্লাহ শান্তিপুরীর বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন ও আব্দুল্লাহ জিয়ার ন্যাশনাল লেবার পার্টি। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে রয়েছেন এম এ আউয়াল এমপি।

জোট প্রসঙ্গে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের মুখপাত্র এম এ আউয়াল বলেন, ‘দেশপ্রেমিক দল, বিখ্যাত আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদরা এই জোটে যোগ দেবেন। এই জোট প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী।’

এরশাদের ডাকে সাড়া দিয়ে চা-চক্রে বসেছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতারা। তবে শেষপর্যন্ত সেই জোটে যোগ দেয়নি দলটি। এ প্রসঙ্গে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে চলছে, প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনের প্রার্থীর তালিকা করেছি। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে ইসলাম ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জোট নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। এরশাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই, তার জোটে আমাদের যাওয়ারও কোনও সম্ভবনা নেই।’

এরশাদের জোট প্রসঙ্গে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ফিরোজ আশরাফী বলেন, ‘আমরা এরশাদের জোটের ডাক পেয়েছি অনেক আগেই। এটা তো নির্বাচনি জোট, তড়িঘড়ি করে নয়, পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবো। এছাড়া, এরশাদের সিদ্ধান্ত এখনও স্থির বলে মনে হচ্ছে না।’

শুধু এরশাদের নয়, কোনও জোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের দলের কোনও জোটে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা নেই।’

জাপার জোট প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক দল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অনেকে যোগাযোগ করছেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ফলে এখনই চূড়ান্ত কোনও কিছু বলা সম্ভব নয়।’