এক বাছুরের মৃত্যুতে শাস্তির খড়গ মুসলমানদের ওপর

একটি বকনা বাছুরের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের তিতোলি গ্রামের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের শাস্তির খড়গ নেমেছে। তাদের দাড়ি রাখা, ঘরের বাইরে প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়া বা সন্তানদের মুসলিম নাম রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গ্রামের এক মুসলিম বালক একটি বকনা বাছুর মেরে ফেলার কথিত অভিযোগে গ্রামের প্রবীণদের পরিষদ বা পঞ্চায়েত তাদের উপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সে সাথে অভিযুক্ত ছেলেটিকে আজীবন গ্রামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বুধবার হিন্দু প্রধান তিতোলি গ্রামের পঞ্চায়েতের সভায় বলা হয়, এ গ্রামের ইয়ামিন নামের একটি ছেলে একটি বকনা বাছুর মেরে ফেলেছে। সে অপরাধের শাস্তি হিসেবে এখন থেকে গ্রামের মুসলমানরা ঘরের বাইরে আর নামাজ পড়তে পারবে না। শুধু তাই নয়, তারা দাড়ি রাখতে পারবে না, তাদের কোনো সন্তানের মুসলিম নাম রাখা যাবে না। আর অভিযুক্ত ছেলেটি আর এ গ্রামে থাকতে পারবে না। এ সভায় গ্রামের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ উপস্থিত ছিল বলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুরেশ নম্বরদার জানান। কিন্তু বাছুরটি কিভাবে ও কেন মারা গেল তা স্পষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, তিতোলি গ্রামে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৮শ’। বকনা বাছুরটিকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে গত মাসে এক দল হিন্দু গ্রামের এক মুসলমানের বাড়িতে হামলা চালায়। গোহত্যা আইনে ১৯৫৫-এর আওতায় দু’ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে হরিয়ানার বিধানসভা সদস্যরা বলেছেন, মুসলমানরা তাদের উপর আরোপিত শাস্তি মেনে চলছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন। রোহটাকের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট রাকেশ কুমার দি হিন্দু সংবাদপত্রকে বলেন, এটা অসাংবিধানিক। এ ব্যাপারে ্আমি গ্রাম প্রধানের সাথে কথা বলব।

স্থানীয় মুসলিম নেতা রাজবীর বলেন, গোলমাল এড়াতে মুসলিমরা পঞ্চায়েতের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে। তারা বোঝাতে চায় যে তারা কোনোভাবেই উগ্রপন্থী নয়। তিনি বলেন, ভারত বিভাগের পর থেকেই আমরা সন্তানদের হিন্দু নাম রাখছি। আমরা মাথায় টুপি পরি না বা দাড়ি রাখি না। আমাদের গ্রামে কোনো মসজিদ নেই। তাই আমরা জুমআর নামাজ বা ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ৮-১০ কিমি দূরের রোহটাক শহরে যাই।

সুরেশ বলেন, মুসলমানদের ঘরের বাইরে নামাজ পড়া ও ছেলেটিকে গ্রামে থাকতে না দেয়ার সিদ্ধান্তের সাথে পঞ্চায়েত আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে গ্রামের মধ্যখানে মুসলমান্ দের যে গোরস্তানটি রয়েছে তা পঞ্চায়েতের দখলে নেয়া হবে। আর মুসলমানদের কবরের স্থান হিসেবে গ্রামের বাইরে একটা জায়গা দেয়া হবে। তবে গ্রাম পঞ্চায়েত মুসলমানদের জাকাত দেয়া বা রোজা রাখার ব্যাপারে এখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।

সুরেশ দাবি করেন, এ গ্রামে কয়েক প্রজন্ম ধরে হিন্দু ও মুসলমানরা সম্প্রীতিতে বাস করে আসছে। তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশ থেকে আসা বসতি স্থাপনকারীরা শান্তি বিনষ্ট করছে।

এদিকে ধর্মনিরপেক্ষ গ্রুপ একতা মঞ্চ পঞ্চায়েতের মুসলিম বিরোধী সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে। মঞ্চের সভাপতি শাহজাদ খান বলেন, এ সব নিষেধাজ্ঞা সংবিধান বিরোধী। মুসলিমরা প্রতিশোধ নেয়ার ভয়ে তাদের দুর্ভাগ্য মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার যশ গার্গ বলেন যে গ্রামে কোনো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা সমাজের লোকদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই। তিনি বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত এ ধরনের কোনো অসাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে আমরা তা দেখব ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।