জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা: খালেদার জামিন বিষয়ে আদেশ ১৪ অক্টোবর

রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আজ বিশেষ জজ আদালতের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলবিষয়ক আদেশের জন্য আগামী ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ রোববার রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে আজ জবাব দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল।

আজ বিশেষ জজ আদালতের কার্যক্রম দুপুর পৌনে ১২টায় শুরু হয়। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা তাঁর অসুস্থতার কথা জানিয়ে জামিন বহাল রাখার যুক্তি তুলে ধরেন। অন্যদিকে, জামিন বাতিলের জন্য যুক্তি দেখান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যেহেতু অসুস্থ, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি আদালতের কাস্টডিতেই আছেন। জেলে থাকা আসামির জামিন বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই।

দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিত করা তাঁর আইনসম্মত অধিকার। জামিন বাতিল করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তৃতীয় কথা হলো আমরা বলেছি, পাবলিক প্রসিকিউটর যে আবেদন করেছেন যে এই মামলা যুক্তিতর্ক থেকে রায়ে নেওয়া হোক। সেইটা আইনসম্মত হয়নি। এবং ফাইভ ফোর্টির বিশ্লেষণ না পাওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞ আদালত আপনার কোনো সিদ্ধান্ত প্রসিড হওয়া আইনসম্মত হবে না।’

অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তার জবাব আজ দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কোনো যুক্তিসংগত জবাব দাখিল করেনি। তাই তাঁর জামিন বাতিল করা হোক।’

আইনজীবী মোশাররফ হোসেনে কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মামলায় যুক্তিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। সেহেতু আমরা রায়ের তারিখ ঘোষণা করার জন্য বলেছিলাম, এক নম্বর পয়েন্ট। আর দুই নম্বর পয়েন্ট ছিল, খালেদা জিয়ার জামিন আমরা বাতিল চেয়েছিলাম। রায়ের তারিখ ঘোষণা করার জন্য আমরা যেই দরখাস্ত দিয়ে রেখেছি, সেই আলোকে মাননীয় আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনেছেন, কথাবার্তা শুনেছেন। তিনি আগামী ১৪ তারিখে উচ্চতর আদালতের আদেশ এবং এ রায়ের বিষয়ে এবং পরবর্তী মামলার রায়ের তারিখের ব্যাপারে তিনি আদেশ দেবেন। ’

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি ছয়জন। খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রাহমান।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ২০১০ সালের ১০ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই থেকে খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। গত ১২ মার্চ তাঁকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন উচ্চ আদালত। পরে গতকাল চিকিৎসার জন্য তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।