ডা. জাফরুল্লাহর দুঃখ প্রকাশ

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধানকে নিয়ে ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ষষ্ঠ তলায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন।

গত সপ্তাহে সময় টিভির আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পাদকীয়তে আলোচক হিসেবে উপস্থিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন চট্টগ্রামের জিওসি ছিলেন, সেখান থেকে সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি যাওয়ার ঘটনায় তার কোর্ট মার্শাল হয়েছিল।

ডা. জাফরুল্লাহর এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায় সেনা সদর।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহর লিখিত বক্তব্য এখানে হুবহু তুলে দেওয়া ধরা হলো—

jafor

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কী করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা স্থাপন করা যায় তা নিয়ে সচেতন নাগরিকের মতো আমিও চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আইনের সংকীর্ণতার কারণে আমার বিকল কিডনি রোগের উত্তম চিকিৎসা সুলভে কিডনি প্রতিস্থাপন বাংলাদেশে সম্ভব নয়। বিধায় জীবনরক্ষার জন্য আমাকে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন চার ঘণ্টা করে হোমাডায়ালিইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিসের পর স্বাভাবিক কারণে শারীরিক দুর্বলতা বাড়ে এবং মানসিক স্থিতি কিছুটা কমে। সময় টেলিভিশনের বিশেষ অনুরোধে শারীরিক দুর্বলতা নিয়েই আমি ৯ অক্টোবর রাত ১০টায় তাদের একটি টকশোতে অংশ নেই। ওই অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ আলম লেনিন। আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমানে সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না ‘কমান্ডডেন্ট’ও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল হয়নি। একবার কোর্ট অব এনকোয়ারি হয়েছিল। ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তিরিক দুঃখিত ও মর্মাহত।’

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী বা জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এরূপ কোনও অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়েছি এবং যুদ্ধ শেষে আমিও প্রথম কুমিল্লা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। পরে আমি ও ডা. আজিজুর রহমান ঢাকা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করার কোনও চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না। আমি খোলা মনে আরও বলেছিলাম, তার ছোট ভাই শীর্ষ সন্ত্রসী জোসেফের দায় দায়িত্ব জেনারেল আজিজের ওপর বর্তায় না। চরম দণ্ডপ্রাপ্ত জোসেফের দণ্ড থেকে মুক্ত করেছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘জেনারেল আজিজকে আমি অসাবধানতাবশত কোনও মনকষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ প্রয়োজন যে, আমি ইতোমধ্যে বিগত দুই দিন কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাটের বিষয় প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। চূড়ান্তভাবে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতেই এই সংবাদ সম্মেলন।’