খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না : দুদকের আইনজীবী

khalada zia
ফাইল ছবি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজার কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায় ঘোষণার পর খুরশীদ আলম খান এ মন্তব্য করেন।

খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া প্রধান আসামি ছিলেন। কিন্তু বিচারিক আদালত প্রধান আসামি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সাজা দিয়ে অন্য আসামিদের ১০ বছর করেছিলেন। এ কারণে আমরা সংক্ষুব্ধ ছিলাম। এরপর আমরা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করেছি। আদালত শুনানি শেষে প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার সাজা ১০ বছর করে দিয়েছেন। এ রায়ের কারণে খালেদা জিয়া আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আমরা আপাতত এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি।’

রায় স্থগিত হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘সেটা পরে দেখা যাবে। তবে আপাতত তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

এর আগে সকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মামলার অন্য আসামিদের ১০ বছরের সাজা বহাল রয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিল, অন্য আসামিদের আপিল এবং সাজা বৃদ্ধির দুদকের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল সোমবার রায়ের জন্য আজ দিন ধার্য করেন আদালত।

এর আগে গতকাল সোমবার সকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তিতে সময় বাড়ানোর আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

একই দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার অপর তিন আসামিকেও একই দণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এর আগে গত ৯ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরপর গত ৩১ জুলাই খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করতে আরো সময় চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন জানালে সোমবার (২৯ অক্টোবর) তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারত মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তারেক রহমানসহ মামলার অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের পর ওই দিনই খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এ মামলায় ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ তিনজন কারাবন্দি। বাকি তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি দুজন হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ।

পলাতক তিনজন হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁরা এ আবেদন করেন।

২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। আজ তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের ওপর রায় ঘোষণা করা হয়।

মামলার অভিযোগে যা বলা হয়েছে

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলার এজাহারে জানা যায়, ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন রমনা শাখার সোনালী ব্যাংকে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন, যার নম্বর ৫৪১৬। ওই হিসাবে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ডি ডি নম্বর ১৫৩৩৬৭৯৭০-তে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ১২ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা তৎকালীন বাংলাদেশি মুদ্রায় চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা জমা হয়। পরে খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন আসামির নামে ‘এফডিআর’ করে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উত্তোলন করেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১০৯ ধারা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ ২ নম্বর আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন। এজাহারে ঘটনার সময়কাল হিসেবে ১৩ নভেম্বর ১৯৯৩ থেকে ২৮ মার্চ ২০০৭ সালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।