গাড়ি চাপায় শ্রমিক নিহতের জেরে আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকা রণক্ষেত্র

ঢাকার অদূরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ডিইপিজেড নতুন জোনে গাড়ি চাপায় শান্তা ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার লিসন (২৬) নামে শ্রমিক নিহতের জের ধরে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা ১১টি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে। এসময় শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ডিইপিজেড এর সামনে চলাচলরত কমপক্ষে ৩০টি বাস- ট্রাক ভাংচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গেলে হাজার হাজার শ্রমিকের বাঁধায় তারা প্রধান গেট দিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেনি।

ঘটনায় সংক্ষুব্দ শ্রমিকরা ক্যামেরায় ছবি ধারন করার কারনে সাংবাদিক মনিরুজ্জামানকে মারধর শেষে ক্যামেরা ও পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও ব্যাপক মারধর করেছে। যারা মোবাইল বা ক্যামেরায় গাড়ি পোড়ানো দৃশ্য ধারণ করতে গিয়েছে তাদেরকেও নাজেহাল হতে হয়েছে। এমনকি অনেকের মোবাইল পর্যন্ত হারাতে হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও মিডিয়া প্রতিনিধি কেউই প্রবেশ করতে পারেনি। রাত সাড়ে আটটার পর থেকে শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সড়ে গেলে যান চলাচল সাভাবিক হতে থাকে।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আশুলিয়ার ডিইপিজেড পূর্ব জোনে শান্তা এ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানা ছুটি শেষে ফেরার পথে প্রধান গেট সংলগ্ন স্থানে শান্তা ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এর কোয়ালিটি পদে কর্মরত লিসন ও তার সহধর্মনী আসলে একটি শ্রমিক পরিবহণ বাস তাদের কে চাপা দেয়। এতে লিসন ঘটনাস্থলেই নিহত হন ও স্ত্রী নিশিথা আহত হন। তবে তাদের বিস্তারিত ঠিকানা পাওয়া না গেলেও নিহত লিসন নড়াইল জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

ঘটনায় আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য দৈনিক আজকালের খবর স্টাফ রিপোর্টার মনিরুজ্জামান জলন্ত গাড়ির ছবি তুলতে গেলে তার মোবাইল শ্রমিকরা ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে বেদম পিটিয়ে আহত করে।

এ ব্যাপারে শান্তা কারখানার শ্রমিকরা জানান, ছুটি শেষে ফেরার পথে প্রধান গেটে আসলে একটি শ্রমিক পরিবহণ বাস সামী-স্ত্রী দু’জনকে চাপা দেয়। এতে সামী নিহত হন। ঘটনার পরপরই হাজার হাজার শ্রমিক প্রধান গেট বন্ধ করে দিয়ে লোডকৃত গাড়ি, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও শ্রমিক পরিবহণ বাসে আগুণ দেয়। এতে প্রায় ১১ টি গাড়ি পুড়তে দেখা যায়। তবে জলন্ত গাড়িগুলোর ছবি তুলতে গেলে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা তাদের লক্ষ্য করে লাঠি পেটা ও মোবাইল ক্যামেরা ছিনিয়ে করে নেয়। শ্রমিকদের হামলায় আরো ১০জন আহত হয়েছে বলেও তারা জানান।

ওদিকে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের গাড়ি চলাচল সন্ধ্যা ৭টা থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই সড়কের সকল পরিবহণ বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। এসময় সড়কটিতে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা ৩টি মাল বোঝাই কাভার্ড ভ্যানেও আগুন দিয়েছে।

আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রিজাউল হক দীপু শ্রমিক নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গাড়ি চাপায় শ্রমিক নিহত লিসন ও আহত নিশিথা নামে এক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে ও আগুন দিয়ে অসংখ্য গাড়ি ভাংচুর করেছে। শ্রমিকদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গেলে শ্রমিকদের রোষানলে পড়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কে আহত করেছে।

শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, শান্তা ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে পোশাক কারখানার এক শ্রমিক গাড়ি চাপায় নিহত হয়েছে। এতে বিক্ষুব্দ হয়ে শ্রমিকরা ডিইপিজেড এর প্রধান গেট বন্ধ করে দিয়ে লোডকৃত কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর কোন সদস্য গেটের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারছেনা।