কেশবপুরে তিনটি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দিলো প্রশাসন

যশোরের কেশবপুর উপজেলার বহুল আলোচিত অবৈধ তিনটি ইটভাঁটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। হাইকোটের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সকল ইটভাঁটা উচ্ছেদ করা হয়।

যশোর জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম নওশাদ ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান কেশবপুর পৌরসভার ভোগতি গ্রামের জামান ব্রিক্স, উপজেলার কাস্তা-বারুইহাটির রোমান ব্রিক্স ও সাতবাড়িয়া বাজারের সুপার বিক্সের যাবতীয় ইট ও ইট নির্মান সামগ্রী নষ্ট করে দেন।

গত বছরে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট করে এ তিনটিসহ নতুন ৫টি অবৈধ ইটভাঁটা বন্ধ করা হয়েছিল এবং নতুন ইটভাটার মালিক আবুবক্কর সিদ্দিক ও পৌরসভার ভোগতির জামান ব্রিক্সের মালিক মমতাজ বেগমকে জেল জরিমানাও করে ভ্রাম্যমান আদালত। এতোকিছুর পরও তারা ইটভাঁটা নির্মান কাজ বন্ধ না করায় হাইকোর্টের নির্দেশে বৃহস্পতিবার তিনটি ইটভাঁটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান জানান, সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে কেশবপুরে অবাধে নির্মান করা হয়েছে অবৈধ ইটভাঁটা। ফসলের মাঠ নষ্ট করে বিত্তবান ও ক্ষমতাশীন লোকেরা অনুমতি ছাড়াই ইটেরভাঁটা নির্মান করে নিজেদের আখের তৈরী করে আসছিল। পরিবেশ রক্ষায় এলাকাবাসির অভিযোগে ২০১৬ সালে কেশবপুরের সকল ইটভাঁটার মালিককে অনুমতিপত্রসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার অফিসে মালিকদের ডাকেন। কিন্তু ১৫টি ইটভাঁটার মধ্যে মাত্র তিনজন মালিক তাদের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান তাদের সাতদিনের মধ্যে কাগজপত্র হাজির করতে বললে মালিকরা তা আজও দেখাতে পারেনি। কোন অনুমতি ছাড়াই তারা অবৈধ ইটভাঁটার কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এলাকাবাসির অভিযোগে সর্বশেষ সাতদিনের মধ্যে উল্লেখিত তিনটি ইটভাঁটা উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করেন। সে মোতাবেক বৃহস্পতিবার দুপুরের যশোর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম নওশাদ ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এনামুল হক, ডি এস ডি কাওসার আজমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনকে নিয়ে কেশবপুর পৌরসভার ভোগতি গ্রামের জামান ব্রিক্স, উপজেলার কাস্তা-বারুইহাটির রোমান ব্রিক্স ও সাতবাড়িয়া বাজারের সুপার বিক্সের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এসময় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনগন ভাঁটাগুলির ইট ও ইট নির্মানের সামগ্রী নষ্ট করে দেয়।

কেশবপুরের নীচু জমিতে মাছের ঘের আর উচুঁ জমিতে ইটভাঁটা করায় দখল হয়ে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমান। কেশবপুরের শতকরা ৯০ ভাগ কৃষিজীবি মানুষ দিনদিন তাঁদের ফসলের জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। ফসলের মাঠ, জনবসতি এলাকা, শহর-বাজার, স্কুল-কলেজের পাশেসহ যত্রতত্র অবৈধ ইটভাঁটা স্থাপন করায় কেশবপুরের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন-২০১৩ অনুযায়ি পৌরসভা এলাকায়, আবাসিক এলাকায় ও কৃষি জমিতে ইটভাঁটা স্থাপন করা যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই কেশবপুরে ফসলি জমিতে নতুন করে তিনটি অবৈধ ইটভাঁটা নির্মান করা হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে উপজেলার কাস্তা-বারুইহাটি চৌরাস্তা মোড়ে আবুবক্কর সিদ্দিক রোমান ব্রিক্স, সাতবাড়িয়া বাজারের পাশে ফারুকুল ইসলাম সুপার ব্রিক্স ও পৌর এলাকার ভোগতি গ্রামে মমতাজ বেগম জামান ব্রিক্স নির্মান করে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৩ ফসলী ও ফলজ বৃক্ষের জমি গ্রাস করে, রাস্তাঘাট, পরিবেশের বিপর্যয়সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় প্রথম থেকেই গ্রামবাসি কৃষকরা ইটভাঁটা স্থাপনের বিরুদ্ধে মানব বন্ধনসহ মিছিল-সমাবেশ করে আসছে। ইটভাঁটা বন্ধের জন্য এলাকার দেড়শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ কেশবপুরের সাংসদ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করেন।

গত বছর ৭ মার্চ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কবীর হোসেন এক ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অনুমতিহীন রোমান ব্রিক্স, জামান ব্রিক্সসহ আরও ৫টি অবৈধ ইটভাঁটা বন্ধ করে দেন। এলাকাবাসি ২০১৬ সালের ১০ মার্চ কাস্তা বাজারে এক জনসভায় উপস্থিত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর ইসমাত আরা সাদেকের কাছে আবারও লিখিতভাবে ইটভাঁটা বন্ধ করার দাবি জানান। ওই জনসভায় তিঁনি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে মালিককে ইটভাঁটা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। সকল নির্দেশ উপেক্ষা করে ইটভাঁটা না সরিয়ে মালিকরা দুবছর ধরে তাদের কার্যক্রম করে আসছিল।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধ তিনটি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সকল স্থাপনা অপসারণ না করলে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।