বন্ধ হতে চলেছে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী ‘ছবিঘর’ সিনেমা হল

সিনেমা হলের গায়ে লম্বা পোস্টারে নায়ক নায়িকাদের ছবি বড় মাপে লেখা সিনেমার নাম। টিকিট কাউন্টারে ভিড়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে লাল রঙের টিকিট হাতে। যুবকটির বার বার ঘড়ি দেখা। এসব দৃশ্য আর দেখতে পাওয়া যাবে না, এক পলকে এসব যেন শুধু স্মৃতির পাতায় স্থান পাবে। ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলি সড়কের নবগঙ্গা নদীর কোল ঘেসে ৬৪ শতক জমির উপর ১৯৫৫ সালের দিকে গড়ে উঠেছিল জেলার প্রথম ঐতিয্যবাহী ছবিঘর সিনেমা হলটি।

জানা গেছে, এক সময় এ হলে উত্তম কুমার সুচিত্রা সেন ও পাকিস্থানের উর্দু ছবিও চলেছে। কিন্তু বর্তমানে মালিক পক্ষ হলটি হটাৎ করেই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে ঝিনাইদহ জেলার ছবি প্রিয় সাধারণ মানুষদের মধ্যে হতাশা দেখা যাচ্ছে। হলের সামনে দেওয়ালে নোটিশ বোর্ড ঝুলছে আগামী ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল টি।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমি ১৯৬৮ সালে গরুর গাড়ীতে এসে এই ছবিঘর সিনেমা হলে “রুপবান” ছবি দেখেছিলাম। বর্তমানে ছবিঘর সিনেমা হলটি বন্ধ হতে যাচ্ছে শুনে আমি খুব দুঃখ পাচ্ছি।

হলের বর্তমান মালিক এ্যাডভোকেট মাজহারুল আনোয়ার সবুজ হল সম্পর্কে বলেন, এটি তার পারিবারিক সম্পত্ত্বি। পূর্বপুরুষগণ ৫০ দশকের দিকে ৬৪ শতক জমিসহ ভবনটি কেনেন। তখনকার সময় এ ভবনটি পাটের গোডাউন হিসাবে ব্যাবহৃত হতো। পরবর্তিতে ভবনটি সংস্কার করে সিনেমা হলে পরিণত করা হয়।

হলটির মালিকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, মুলত আমার দাদারা তিনভাই মিলে এ হলটির মালিক ছিলেন। তারা হলেন- মরহুম সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, মরহুম আনসার উদ্দিন, মরহুম শহীদ নজির উদ্দীন ও মোঃ কাজী রায়হান উদ্দিন। আমার দাদারা মিলে এই সম্পত্তিটি কিনেন এবং তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ছবিঘর সিনেমা হলটি জনপ্রিয়তা পায়। তখন মরহুম সিরাজ উদ্দিন আহমেদ এ সিনেমা হলটি পরিচালনা করতেন। মরহুম সিরাজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর ছেলে পৌর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মশা হলটি পরিচালনার দায়িত্ত্ব নেন।
চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাজহারুল আনোয়ার সবুজ ২০০১ সালে পরিবারের অন্যান্য মালিকদের কাছ থেকে লিজের মাধ্যমে হলটি চালাচ্ছেন বর্তমানে।

সিনেমা হলটি বন্ধ হচ্ছে কেনো জানতে চাইলে এ্যাডভোকেট মাজহারুল আনোয়ার সবুজ বলেন, সিনেমা হলটির জমির অংশীদার এখন বেড়ে গেছে। পরিবারের অনেক সদস্যরা চাচ্ছেন না হলটি থাকুক তাছাড়া অনেকেই তাদের অংশের জমি বিক্রি করতে চাচ্ছেন। সে জন্য বর্তমানে হলটি টিকিয়ে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে বাধ্য হয়েই বন্ধ করতে হচ্ছে বাপ দাদার গড়া প্রতিষ্ঠানটি।

জেলা কালচারাল কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, চলচ্চিত্র সমাজ পরির্তনের সবসময় বেপক ভুমিকা রেখে চলেছে। চলচ্চিত্র প্রকাশের মুল মাধ্যম সিনেমা হল। সিনেমা হল যদি একের পর এক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রর উপরে ক্ষতিকারক প্রভাব আনবে। সে জন্য পুরাতন সিনেমা হলগুলোকে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা তত্বাবধানের আওতায় নিয়ে এসে সিনেমা হলগুলোকে বাঁচাতে হবে। ছবিঘর সিনেমা হলটি অত্যাধুনিক সিনে কমপ্লেক্স এ রুপান্তরের দাবী জানান তিনি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ এ ব্যাপারে জানান, ঝিনাইদহের ইতিহাসের সাথে ছবিঘর সিনেমা হলটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।

তিনি আরো জানান, হলটি টিকিয়ে রাখার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করা হবে। মন্ত্রনালয় যে ভাবে নির্দেশনা দেয় আমরা সে পক্রিয়ায় আগাব।