বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিজ বাড়িতে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তিনি মারা যান। তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবু তাহের বলেন,‘মা দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপরও শ্বাসকষ্ট কমছিল না। এই শ্বাসকষ্টজনিত কারণেই তিনি মারা গেছেন।’
প্রসঙ্গত, বীরপ্রতীক তারামন বিবির আসল নাম তারামন বেগম। তার জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার কাচারিপাড়ায়। তার বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি। তার স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১নম্বর সেক্টরের হয়ে তারামন বিবি মুক্তিবাহিনীর জন্য রান্না, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করাসহ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
বিজয় মাসের প্রথম দিনই মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কাচরিপাড়ায় নিজ বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বীর এই যোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
ছেলে আবু তাহের জানান, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত এ বীরাঙ্গনা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। আজ বাদ জোহর নামাজে জানাজা শেষে তাকে নিজ বাড়িতেই দাফন করা হবে।
কুড়িগ্রামের শংকর মাধবপুরে ১১ নম্বর সেক্টরে কমান্ডার আবু তাহেরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারামন বিবি।
মুক্তিযুদ্ধে সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে তারামন বিবিকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। তবে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি।
যুদ্ধের প্রায় দুই যুগ পর ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে তার সন্ধান পান। তথ্য দিয়ে তাকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী।
এরপর ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন বিএনপি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবির হাতে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেয়।
উল্লেখ্য, বাকশক্তি হারিয়ে গত নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে তারামন বিবি ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসার পর তিনি অনেকটা সুস্থ হন। কথাও বলা শুরু করেন।
এর তিন মাস আগে গত আগস্টে তারামন বিবিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর সিএমএইচ থেকে ঢাকা সিএমএইচে আনা হয়েছিল।
শুক্রবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বাড়িতেই তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। পরে রাত দেড়টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন জানান, বীরপ্রতীক তারামন বিবির নামাজে জানাজা দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।