জাতীয় সংসদের ভোট এলেই নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। রোববার দুপুরে দলটির এক নেতা জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন বন্দি আছেন।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা জানান জাপার সংহযোগী সংগঠন যুবসংহতির যুগ্ম-মহাসচিব জহির উদ্দিন। তিনি এদিন ঢাকা-১৭ আসনে এরশাদের জন্য লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দের আবেদন জমা দেন।
এরশাদ এখন কোথায়— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জহির উদ্দিন বলেন, ‘স্যারতো (এরশাদ) এখন বন্দি। আমি এতটুকুই জানি, এর বেশি বলতে পারছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্যারের পক্ষে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দের আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছিলাম। সেটি জমা দিয়েছি।’
এ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন নায়ক আকবর হোসেন পাঠান।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দর-কষাকষির মধ্যেই অসুস্থ হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। অসুস্থতা নিয়েও দলের ভেতরে-বাইরে নানা কথা আছে। রাজনৈতিক মহলে এটিকে তার ‘নির্বাচনী রোগ’ বলেও টিপ্পনি করা হয়। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কয়েক দফা অন্তরালে চলে গেছেন তিনি। দল থেকেও তার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য জানানো হচ্ছে। গত ৩ ডিসেম্বর সদ্য মহাসচিব পদ হারানো এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, স্যার বাসায় আছেন। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
ঠিক পরের দিনই এরশাদ তাকে দলীয় মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেন। ওই পদে আনেন মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। ওইদিনই রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদ সাহেব বাসায় ভয় পান। এজন্য নার্সসহ চিকিৎসা সুবিধা পেতে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গিয়ে থাকছেন।
তিনি বলেন, ‘স্যারের (এরশাদ) বাসায় নিকটাত্মীয় কিংবা স্বজন কেউই নেই। সেখানে তিনি একা একা থাকতে ভয় পাচ্ছেন। এজন্য একটু অসুবিধাবোধ করলে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সিএমএইচে চলে যাচ্ছেন। এটিকে ভিন্নভাবে নেয়ার কিছু নেই।’
নতুন মহাসচিব আরো বলেন, ‘চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে কথা বললেন। তার ছেলে স্বাদের সঙ্গে কথা বললেন। জিএম কাদেরের সঙ্গেও কথা বললেন। এ থেকেই বোঝা যায়, তিনি শতভাগ সুস্থ।’
এরপর শনিবার এরশাদের স্বাক্ষর করা চিঠিতে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে তার বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে জাপা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতে চেয়ারম্যানের সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন রুহুল আমিন হাওলাদার। তার পদমর্যাদা হবে পার্টির চেয়ারম্যানের পরে তথা দ্বিতীয় স্থান। জাপার গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত এরশাদ কোথায় আছেন, তার দলের নেতারা স্পষ্ট করেননি।
জানা গেছে, অন্তত ১০ নেতা জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। কয়েকজন নেতা পদত্যাগও করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা-১ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন না পেয়ে সবচেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান জাপার সাংসদ সালমা ইসলাম। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে আলোচিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকে।
দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রশীদ সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা রিন্টু আনোয়ার ও রোকন উদ্দিন পদত্যাগ করেন। নীলফামারী-৪ আসনের দলীয় সাংসদ শওকত চৌধুরী, দিনাজপুর-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সোলায়মান সামি, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের শেখ শরিফুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের কাজী মামুনুর রশীদ ও জয়পুরহাট-২ আসনে আবুল কাশেমসহ আরও কয়েকজন গণমাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন।