ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের স্মরণ করল নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলার ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ওই হামলায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। শুক্রবার নিহতদের স্মরণে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে নিউজিল্যান্ড।

গত ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে জুমার নামাজের সময় হামলা চালানো হয়। নামাজরত মুসল্লিদের এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামের ২৮ বছর বয়সী এক উগ্র-ডানপন্থি। ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনায় নিউজিল্যান্ডে শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিউজিল্যান্ড ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এই হামলায় স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ অতর্কিত ওই হামলায় নিউজিল্যান্ডের নাগরিক ছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বেশ কিছু দেশের নাগরিক নিহত হয়েছেন।

মুসলিম নেতা এবং ওই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে স্মরণ সভায় অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। ১৯৭০ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ব্রিটিশ গায়ক কেট স্টিভেনও ওই স্মরণ সভায় যোগ দেন।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ক্রাইস্টচার্চের হেগলি পার্কে আয়োজিত ওই স্মরণ সভায় যোগ দিয়েছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। আল নূর মসজিদের কাছে অবস্থিত ওই পার্কের স্মরণ সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন বলেন, আমরা যেমন চাই তেমনটা হওয়ার জন্য নিউজিল্যান্ডের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ঘৃণা, ভয় বা অন্য কোনো ধরনের শঙ্কা থেকে মুক্ত নই। আমরা কখনও ছিলাম না। কিন্তু আমরা এমন একটি জাতি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারি যারা এ ধরনের শঙ্কার বিরুদ্ধে প্রতিকার খুঁজে বের করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও ওই শোক সভায় যোগ দিয়েছেন।

ভয়াবহ ওই হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ফরিদ আহমেদ। কিন্তু তার স্ত্রী হুসনা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও ফরিদ জানিয়েছেন, তিনি ওই হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি এমন একটি হৃদয় চাই না যা আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত। আমি এমন একটি হৃদয় চাই যা ভালোবাসা এবং মায়ায় পূর্ণ এবং যার মধ্যে করুণা থাকবে।

ব্রিটিশ গায়ক কেট স্টিভেন মুসলিম হওয়ার পর তার নাম হয়েছে ইউসুফ ইসলাম। তিনি ওই শোক সভায় নিহতদের স্মরণ করে ‘পিস ট্রেইন’ এবং ‘ডোন্ট বি শাই’ গান দু’টি গেয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যমে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চের মেয়র। ক্রাইস্টচার্চের ওই হামলার সময় পুরো ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে লাইভ করা হয়েছিল। ফেসবুক ওই ভিডিও সরিয়ে ফেলার আগেই তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ওই ভিডিও শেয়ার করেছেন।

মুসলিম কমিউনিটির সদস্যদের আয়োজনে ওই স্মরণ সভায় নিহত ৫০ জনের নাম স্মরণ করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারী, পুরুষ এবং শিশু ওই হামলায় নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শিশুটির বয়স মাত্র তিন বছর।