ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় অবৈধ পথে ভারতে পাচার হওয়া ২৪ জন বাংলাদেশি যুবক দীর্ঘ আড়াই বছর ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরে এসেছে।
শুক্রবার দুপুরে বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে ভারতীয় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদেরকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোষ্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাদেরকে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করে। পরবর্তীতে বেনাপোল পোর্ট থানা কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে রাইটস যশোর নামে একটি এনজিও সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা হলেন- খুলনা জেলার জাফর চৌধুরীর ছেলে জুয়েল চৌধুরী (২৩), মাজেদুল ইসলামের ছেলে সফিকুল ইসলাম (৩৩), বরকত শেখের ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৩), আমিন সরদারের ছেলে লিটন মোহাম্মাদ (২৮), শাহাদতের ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৬), আব্দুল ছাত্তার খানের ছেলে বাবু খান (২৭), রফিকুল ইসলামের ছেলে রিফাত খান (২২), রেজাউল ইসলামের ছেলে সাগর হোসেন (২৪), আখতার খানের ছেলে রাকিব খান (২৪), রেজাউল শেখের ছেলে হাসান শেখ (২২), জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে রনি হাওলাদার (২৩), যশোর জেলার আমজাদ হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ মোল্যা (২৬), আব্দুল হোসেনের ছেলে জামাল মোল্যা (২৪), জহুর আলী সরদারের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৩), গফফার গাজির ছেলে ইমাম হোসেন (২২), আবুল হোসেনের ছেলের আল-আমিন (২৩), হাবিবুর রহমানের ছেলে সাদ্দাম ব্যাপারী (২৮), আব্দুল খায়েরের ছেলে আলামিন (২৫), মহাসিন সেখের ছেলে রাজিব শেখ (২০), আবুল খালেকের ছেলে সাব্বির হোসেন (২২), আলমগীর মোল্যার ছেলে আশরাফ হোসেন (২৫), বাগেরহাট জেলার মহিমুদ এর ছেলে নুর ইসলাম (৪৬), আছাদের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪৬), সাতক্ষীরা জেলার সবেদ আলীর ছেলে আব্দুল গনি (৩৮)।
ফেরত আসারা জানায়, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে গত আড়াই বছর আগে ভালো কাজের প্রলোভনে তারা দালালের খপ্পরে পড়ে সীমান্ত পথে ভারতের বেঙ্গালুর শহরে যায়। দালাল চক্র ভাল কাজের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তাদের ফেলে পালিয়ে আসে। এ সময় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করে অন্ধপ্রদেশের ভিজাপুর করনেটো জেলহাজতে পাঠায়। সেখান থেকে তালাশ এ্যাসোসিয়েশন নামে ভারতের একটি এনজিও সংস্থা তাদের জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে। পরবর্তীতে দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আইনে তাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়।
যশোর রাইটস নামে একটি বে-সরকারী এনজিওর এরিয়া কো-অর্ডিনেটর তৌফিকুজ্জামান বলেন, ফেরত আসাদের ইমিগ্রেশন ও বেনাপোল পোর্ট থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে যশোর তাদের অফিসে নেওয়া হবে। এরপর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ফেরত আসা বাংলাদেশিরা যদি পাচারকারীদের শনাক্ত করে মামলা করতে চায় তবে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান এই এনজিও কর্মকর্তা।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল বাশার জানান, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে গত আড়াই বছর আগে এইসব বাংলাদেশিরা ভাল কাজের আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতের অন্ধপ্রদেশে যায়। সেখানে রাজমিস্ত্রী, রংমিস্ত্রির কাজ করার সময় সেদেশের পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। আদালতের মাধ্যমে ২-৩ বছর অন্ধপ্রদেশের ভিজাপুর করনেটো জেল খানায় থাকে। পরে দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে আজ সকালে ভারতীয় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ২৪জন বাংলাদেশিকে বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছেন। তবে ২৪ বাংলাদেশি ফেরত আসার বিষয়টি আগেই ভারতীয় পেট্রাটোল ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে আগেই জানানো হয়েছিল। এদের সকলকে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
