তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞাপন দিয়ে হলেও প্রকাশ করব: পূর্তমন্ত্রী

বাংলাদেশে কোনো ঘটনায় পরিদর্শন ও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না- এমন অভিযোগ সত্য বলে মনে করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর বহুতল ভবনের অসংগতি খুঁজতে রাজউকের পরিদর্শনের পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশ করা হবে।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তে ঢাকা ইউটিলিটি অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি নিরাপদ, পরিবেশসম্মত ও বিল্ডিং কোড অনুযায়ী রাজধানীকে সাজাতে নানামুখী পরিকল্পনার কথা জানান। পুরান ঢাকাকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী।

নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির কোনো প্রতিবেদন সাধারণত প্রকাশ হতে দেখা যায় না। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি অভিযোগটা সত্য। এবার আমরা তদন্ত ও পরিদর্শনের প্রতিবেদন, কার কার ইমারতে কী কী সমস্যা আছে, সেটা জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করব। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশ করব।’

ঢাকা শহরের প্রাচীনত্বের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী পুরান ঢাকার নিরাপত্তা সম্পর্কে বলেন, ‘পুরান ঢাকার ভবনগুলো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে পুরান ঢাকাকে রাতারাতি ভেঙে ফেলে নিরাপদ ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশসম্মত আবাসন এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। আপাতত পুরান ঢাকাকে একেবারে ঝুঁকিহীন সব রকম ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।’

তবে পুরান ঢাকা নিয়ে সরকার রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় পাঁচ কাঠা জায়গার ‍ওপর যদি তিনটি ভবন থাকে তাহলে আমরা পরিবেশসম্মত, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন করে দেব এবং রেশিও (অনুপাত) অনুযায়ী ওই ভবন মালিকদের ফ্লাট দেব।’

আর নতুন শহরগুলো যেমন- পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প সম্পর্কে শ ম রেজাউল বলেন, ‘সেখানে ৪৫ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রেখে ভবনের অনুমোদন দিচ্ছি; যাতে একটি বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়ির মাঝখানে বিশাল জায়গা ফাঁকা থাকে। সেখানে যেন পরিবেশদূষণ না হয়, মানুষ মুক্ত বাতাস নিতে পারে। খেলার মাঠ, পার্ক, লেক, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা রেখেছি।’

কাজ করতে গিয়ে কোনো চাপে আছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান উপরে আল্লাহ ও শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো চাপটাপ নেই তার। বলেন, ‘আমি ভয় পাই আল্লাহকে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি শেখ হাসিনাকে ঘিরে। কোনো চাপের কাছে মাথা নত করি না। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা, তিনি যেটা চাইবেন সেটা হবে। তিনি চেয়েছেন কোনো অপরাধীর কোনো দুর্নীতি, কোনো অনিয়মকে সহ্য করা যাবে না। জিরো টলারেন্স, সেজন্য কোনো চাপই আমাকে আমার লক্ষ্য থেকে ফেরাতে পারবে না।’

মিট দ্য প্রেসে মন্ত্রী রাজধানীর বহুতল ভবনগুলোর নানা ত্রুটি এবং এর প্রতিকারের নির্দেশনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কোনো ভবনে জরুরিভাবে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভবনে সেই রাস্তাটাই করা হয়নি। সেই ইমার্জেন্সি এক্সিট (জরুরি নির্গমন) যে ভবনে নেই, তাদের আমরা নির্ধারিত সময় বেঁধে দেব; সেই সময়ের ভেতরে তা করতে হবে। যে ভবনে থাকার পরও ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাদেরও ব্যবহার করার জন্য সময় দেব।’

‘কোনো কোনো ভবন আছে’, মন্ত্রী বলেন, ‘যেগুলো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। তাদের আমরা একটি নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে বলব, এ সময়ের ভেতরে বিল্ডিং কোডে যে ব্যবস্থা অনুমোদন করা হয়েছে, সে জাতীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সম্পৃক্ত করতে হবে। করার পর আমরা আবার পরিদর্শনে লোক পাঠাব। তারা দেখে সনদ দেয়ার পরে আমরা সেই বিল্ডিংকে ব্যবহার উপযোগী ঘোষণা করব।’

নকশার বাইরে অবৈধভাবে তলা বাড়ানো ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা জানাতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা ঊর্ধ্বমুখী ভবন করেছেন, তারা যদি সেই অংশটা আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির মাধ্যমে আলাদা পিলার করে, আলাদাভাবে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করাতে পারেন, সেটাকে আমরা একটা নির্ধারিত ব্যবস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রণ করব। যদি দেখা যায় যে, ভবনেরই ক্ষমতা নেই, উপরের দুটি ফ্লোর কোনো রকমে দাঁড় করিয়ে ধরে রাখার মতো অবস্থা, আলাদা প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব নয়, সেটা তাদের সরিয়ে নিতে হবে।’

ঢাকার বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শন করতে ইতোমধ্যে ২৪টি পরিদর্শন দল গঠন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তারা প্রথম পর্যায়ে শুধু বহুতল ভবনকে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি রয়েছেন।

সংগঠনের সভাপতি মশিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম, অর্থ সম্পাদক রুহুল আমিন প্রমুখ।