‘বোরকা ও কেরোসিন আনার দায়িত্ব পড়ে শম্পার ওপর’

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আটজন হলেও হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে মামলাটির তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাতজনকে। এরমধ্যে আসামি নূর উদ্দিন রিমান্ডে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

এজাহারভুক্ত আট আসামির মধ্যে পরিকল্পনাকারী শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), নূর উদ্দিন (২০), কাউন্সিলর মাকসুদ আলম (৪৫), জোবায়ের আহমেদ (২০), জাবেদ হোসেন (১৯) ও আফসার উদ্দিনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও তদন্তের স্বার্থে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে নজরদারীর মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই। বার্তা সংস্থা বাসসের এক খবরে এসব জানানো হয়েছে।

একই ঘটনায় আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার সোনাগাজী ইসলামি ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এজাহারভুক্ত অপর আসামি হাফেজ আব্দুল কাদের পলাতক রয়েছেন।

মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ঘটেছে।

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, অধ্যক্ষের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটেছে। মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ৪ এপ্রিল আসামি নূর উদ্দীন ও শাহাদাতসহ কয়েকজন কারাগারে গিয়ে সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করেন। তখন সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে কিছু একটা করার নির্দেশনা দেন। এরপর ৫ এপ্রিল সকালে নূর উদ্দিনসহ কয়েকজন মিলিত হয়ে পরিকল্পনা করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হবে।

বনজ কুমার মজুমদার জানান, আসামি নূর উদ্দিন ঘটনার দায় স্বীকার করে আগুন দেওয়ার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। পরিকল্পনামতো তিনটি বোরকা ও কেরোসিন আনার দায়িত্ব পড়ে শম্পা নামে এক ছাত্রীর ওপর। শম্পা মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে। ওই ছাত্রী কথা মতো ৬ এপ্রিল শনিবার সকাল ৯টায় শাহাদাতের কাছে কেরোসিন ও বোরকা হস্তান্তর করেন। সকাল ৯টার পর ওই মাদ্রাসার ভবনের ছাদে চারজন অবস্থান নেন। পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া শম্পা ওরফে চম্পা নামে ওই ছাত্রী নুসরাতকে জানান, তাঁর সহপাঠী নিশাতকে ভবনের ছাদে মারধর করা হচ্ছে। ওই খবরে নুসরাত ছাদে গেলে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। প্রথমে ওড়না দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। মাদ্রাসার বাইরে নূর উদ্দিনের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ও গেট পাহারা দেন। আগুন দেওয়ার পর সরাসরি অংশ নেওয়ারা বোরকা পরে বের হয়ে যান।

হত্যার কারণ

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, যৌন নির্যাতনের মামলা হওয়ায় আলেম সমাজকে হেয় করা হয়েছে- এই ধরনের ‘যুক্তি’ দিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা জেলে থেকেই তাঁর সাঙ্গপাঙ্গোদের নির্দেশ দেন নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে মারার। অধ্যক্ষ তাদের জানান, নুসরাত প্রথমত মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ আলেম সমাজকে হেয় করেছে, দ্বিতীয় কারণ হলো- শাহাদাত নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কোনোভাবেই তা মেনে নেননি। এই রাগে অধ্যক্ষের সহযোগীরা ও শাহাদাত নুসরাতকে হত্যা করে।

গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফি মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে গেলে একদল দুর্বৃত্ত তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দগ্ধ অবস্থায় ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা।