যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে: কাদের

obidul kader
ফাইল ছবি

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এখন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। আরও কিছু কাজ আমাদের বাকি আছে। আমরা এ কাজগুলোর আরও অনেক কিছু আগামী বছরের মধ্যে শেষ করতে পারব।’

মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে সাসেক প্রকল্পের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাইমাইল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেতুমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, সওজের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মো. সানাউল হক, সাসেক প্রকল্পের পরিচালক আবু ইসহাক, সওজের ঢাকা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান প্রমুখ।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা সিটিতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সিটিতে যানজট, দুর্ভোগ এখনো রয়ে গেছে। আমরা ঈদের পর এসব নিয়ে মিটিং করব। যানজট নিরসনের স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ আমরা নেব। সব স্টেক হোল্ডারের মতামত গ্রহণ করে ঢাকার জীবনযাত্রা স্বস্তিদায়ক করার জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করব। এর মধ্যে আন্তজেলা এবং ঢাকা ও এর আশপাশে গণপরিবহনে বিআরটিসির নতুন গাড়িগুলো স্বস্তি এনেছে। ঢাকা সিটিতে আধুনিক গণপরিবহনের যে উদ্যোগ মেয়র আনিসুল হক নিয়েছিলেন, সে উদ্যোগটিও আবার নতুন করে নেওয়া হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে, যাতে ঢাকায় আমরা জনগণকে আধুনিক গণপরিবহন উপহার দিতে পারি এবং এখন মাঝেমধ্যে যে দুর্ভোগ হয়, সেই দুর্ভোগের অবসান ঘটানো যায়।’

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের পরিবহন ও সড়কে যদি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে শুধু ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ফোর লেন, নতুন ব্রিজ এসব স্থাপনা দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য শৃঙ্খলার যে সংকট সে সংকট থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পরিবহনে যে বিশৃঙ্খলা এবং আমাদের সড়কে যে বিশৃঙ্খলা বিরাজমান, সেগুলো দূর করতে হবে। সড়কগুলো অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে হবে। যে অভিযানটা আমি অনেক আগে থেকেই শুরু করেছি, এটা এখনো পুরোপুরি সফলতার মুখ দেখেনি। তবে বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা দখলমুক্ত হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে এ উদ্ধার অভিযানে আমরা সফল হতে পারি।’

মন্ত্রী বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ তথা উত্তর জনপথের সঙ্গে সামনের দিনগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে, অনেক নির্বিঘ্ন হবে। অনেক সময় আজকে কমে যাচ্ছে। আজকে এদিকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষের যে উদ্বেগ ছিল, যে দুর্ভোগ ছিল, তার অবসান হয়েছে। আজকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চার ঘণ্টায় যাওয়া যায়। গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ, গাজীপুর থেকে উত্তর জনপদের জেলাগুলোর দিকে যে যাত্রা, সে যাত্রা ইতিহাসের সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক যাত্রা আমরা জনগণকে উপহার দিতে পেরেছি এবং এ প্রকল্পের যে দুটি উড়ালসেতু, রেলওভার পাস, অনেকগুলো সড়ক সেতু প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ঈদ উপহার হিসেবে দিয়েছেন। এ ছাড়া কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী দ্বিতীয় সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার জনগণের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন এবং স্বস্তিদায়ক করেছেন। এটা দেশবাসী উপলব্ধি করছেন এবং প্রশংসার সঙ্গে সবাই বিষয়টি নিয়েছেন।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘ছোট ছোট যে যান রয়েছে, সেগুলো চলাচলের জন্য ফিডার রোডের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা অবিলম্বে এ ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। গরিব মানুষ জীবিকার জন্য এ যানগুলো চালায় এবং গরিব মানুষ এ গাড়িগুলোতে যাতায়াত করে। এর বিকল্প ব্যবস্থাও আমাদের করতে হবে। তা না হলে এগুলো বন্ধ করেও আমাদের জনগণের চাহিদা মেটানো যাবে না। এগুলো বন্ধ করতে হলে কী বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়, এ ব্যাপারে বিআরটিএ-কে নির্দেশ দিয়েছি। তারা পেপার রেডি করছে। আমরা শীঘ্রই এ ব্যাপার নিয়ে বসব এবং স্থায়ী সমাধান করব।’

‘বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দী থাকলে এবারের ঈদ হবে সবচে বেদনাদায়ক’ বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আদালতের এখতিয়ার। আর যে মামলায় তিনি কারাবন্দী এবং সাজাপ্রাপ্ত, সেই মামলা বর্তমান সরকারের ফাইল করা কোনো মামলা নয়। এ মামলা বর্তমান সরকারের আমলে হয়নি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলা হয়েছিল এবং এটা আদালতের বিষয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) লিগ্যাল ব্যাটলে (আইনি লড়াইয়ে) ফেল করেছে, বিএনপির আইনজীবীরা প্রমাণ করতে পারেননি যে তিনি নির্দোষ। এ ছাড়া তাঁর মুক্তির জন্য বিএনপি চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। এ জন্য তারা বারবার আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছে তাতে জনগণ সাড়া দেয়নি। এটাতো আমাদের দোষ নয়। তারা খালেদা জিয়াকে লিগ্যাল ব্যাটলেও মুক্ত করতে পারেনি, রাজপথের আন্দোলনেও বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে পারেনি। এটা তো তাদের ব্যর্থতা। এখানে সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই।’

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা প্রতিবছরই ঘটে। এবারও ঘটেনি, তা আমি বলব না। বাস্তবে এ ধরনের অভিযোগ আছে। তবে হাতেনাতে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে ঢাকার যেখানে যেখানে অভিযোগ পেয়েছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিআরটিএর ভিজিল্যান্স টিম বিভিন্ন টার্মিনালে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জরিমানা করেছে, ও সংশ্লিষ্ট কাউন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, সৌদি আরব সফর শেষে বর্তমানে ফিনল্যান্ডে আছেন। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।