‘আড়ংয়ের অভিযানের সঙ্গে মঞ্জুরের বদলির সম্পর্ক নেই’

আড়ংয়ের অভিযানের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, মঞ্জুরের বদলির সিদ্ধান্ত গত মাসের ২৯ তারিখ নেওয়া হয়েছিল। এটি সরকারের নিয়মিত বদলির অংশ।

মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের যে বদলির বিষয়টি, এটা নিয়ে জনমনে একটি সন্দেহ এসেছে। কারণ গতকাল আড়ংয়ে তিনি একটি অভিযান চালিয়েছেন। সেই অভিযানের একটু আগেই কিন্তু বদলিটা হয়েছে। কিন্তু দুটিকে এক করে ফেলা হচ্ছে। আসলে বদলির বিষয়ের সাথে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সরকারের নিয়মিত যে বদলির বিষয় থাকে সেই বদলির বিষয় হয়েছে। গত মাসের ২৯ তারিখে তাঁর বদলির সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছিল নিয়মিতভাবে এবং স্বাভাবিকভাবে। গতকালকে প্রজ্ঞাপনটা জারি করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটার আগেই কিন্তু প্রজ্ঞাপনটা জারি করা হয়েছে।

একটা বিষয় আমি স্পষ্ট করতে চাই এই ঈদের আগে আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমরা ব্যাপকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে যাতে করে ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়, ভোক্তা অধিদপ্তরকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই যে উচ্চ মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করছে বিভিন্ন নামি-দামি প্রতিষ্ঠানগুলো সেগুলো যাতে ধরা যায় এমনকি বড় বড় বিউটি পার্লার ঢাকাতে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যারা দেশের সেরা বিউটি পার্লার, মেয়াদোত্তীর্ণ কসমেটিকস ব্যবহার করায় তাদের কিন্তু বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কঠোর একটা অবস্থায় গেছে সরকার। এই অবস্থানটি চলবে। আমরা ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়েছি। আমরা চাই মানুষের মনের মধ্যে স্বস্তি আসুক। সেটি এসেছে ঈদের আগে। মানুষ কিন্তু সন্তুষ্ট সরকারের এসব পদক্ষেপে। কিন্তু গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে আসলে আড়ংয়ের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে স্বাভাবিকভাবে যেটা বদলি হয় সেটা করা হয়েছিল। ২৯ তারিখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়ে প্রজ্ঞাপনটি সেদিন জারি হয়নি। গতকালকে আড়ংয়ের ঘটনাটি যখন চলছিল ঠিক তার আগে সেটা প্রজ্ঞাপন হয়েছে। একই সঙ্গে দুটি ঘটনা ঘটায় জনগণের মনের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সন্দেহ দূর করার জন্য আমরা শাহরিয়ারকে বদলির যেই আদেশ ছিল সেই আদেশটি জনপ্রশাসন থেকে বাতিল করা হয়েছে, তাঁকে স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে। আমরা এই ধরনের অফিসারকে সব সময় মূল্যায়ন করি। সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের ক্ষেত্রে তিনি সরকারের যে নির্দেশ বাস্তবায়ন করছিলেন—আমরা তার প্রশংসা করি। আমরা তাঁকে একটা ভালো জায়গায় বদলি করছিলাম। কিন্তু এটার সঙ্গে এটার সম্পর্ক ছিল না। তিনি কাজ করতে থাকবেন।’

একজন গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সকালে বস্ত্র বিপণন প্রতিষ্ঠান আড়ংয়ের উত্তরার আউটলেটে অভিযান চালান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক। অভিযান শেষে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আড়ংকে জরিমানা করেন এবং আউটলেটটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেন।

একই দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের পদ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা হিসেবে প্রেষণে বদলি করা হয়।

আদেশে আরো বলা হয়, ‘আগামী ১৩ জুন দুপুরের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান না করলে স্ট্যান্ডরিলিজ হয়ে যাবেন।’

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ প্রজ্ঞপন জারি করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবদুল লতিফ।

এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। এর মধ্যে আবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপদে বহাল রাখার আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক আজ দুপুর ১টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে একটি স্ট্যাটাসও দেন। এতে তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জনাব মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের ভেজাল ও ঈদ উপলক্ষে পণ্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি বিরোধী অভিযান প্রশংসিত হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বদলি সংক্রান্ত বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা হওয়ায় এই মুহূর্তে ফিনল্যান্ড সফররত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়।

পরবর্তীতে আজ সকালে যথাযথ কর্তৃপক্ষ জনাব মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলি আদেশ বাতিল করেন।’

আজ সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের বদলি ও পদায়ন (এফএডি) শাখা আগের দিনের আদেশ স্থগিত করে।