অবৈধভাবে নির্মিত বাড়ি মন্ত্রীর হলেও রেহাই নেই: রেজাউল করিম

রাজধানীতে নিয়ম না মেনে নির্মিত সব বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলছেন, ভবন যদি কোনো ব্যক্তির আয়ের উৎস হয়, তা কোনোভাবেই মানুষের জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে না।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রীর এমন বক্তব্য আসে।

তিনি বলেন, “নতুন ঢাকায় যারা নিয়ম না মেনে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন, তাদের একেবারে অনিয়মের বিল্ডিংগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।”

যেসব ভবনে কিছু অনিয়ম হয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলাদা পিলার বা আলাদা ভিত্তি দিয়ে টিকেয়ে রাখা সম্ভব, সেগুলোকে ছাড় দেওয়া হলেও ঝুঁকি সৃষ্টি করে এমন ভবন ছাড় পাবে না বলে হুঁশিয়ার করেন মন্ত্রী।

“যেটাকে কোনোভাবে রাখা যাবে না যদি তারা (ভবন মালিক) ভাঙতে না চান সেসব বিল্ডিং আমরা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ও ব্যবহার অনুপযোগী বলে সিলগালা করে দেব। ওই বিল্ডিং ব্যবহারও করতে দেব না। কারণ মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়ে কোনো ব্যক্তির বিল্ডিংয়ের আয়ের উৎসের জায়গাটা আমাদের কাছে কোনোভাবে বড় না।”

বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, সেখানে ৬২ জন কর্মকর্তাকেও চিহ্নিত করা হয়েছে।

“আমি শুধু বাড়িওয়ালাকে ধরব, আমার লোককে ধরব না, তাহলে তো জিরো টলারেন্স হল না। জিরো টলারেন্সের প্রশ্নে এই ৬২ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত সপ্তাহে রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি।”

এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর রাজউকের ২৪টি দলে কাজ করে এক হাজার ৮১৮টি বাড়িতে (বহুতল ভবন) অনিয়ম পেয়েছে বলে তথ্য দেন পূর্ত মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এসব বাড়ির অনেক মালিক অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি; ক্ষমতায়, রাজনীতিতে, অর্থে, তাদের সম্পর্কে রিপোর্ট করা হবে অনেকেই ভাবেননি, কারণ তারা এত পাওয়ারফুল। এসব বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, আপনারা আমাদের সাহায্য করেন।

“তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি, বলেছি একটা বাড়িও ড্রপ হবে না। যদি কোনো মন্ত্রী-এমপির বাড়িও হয়, আমার নিজের কোনো আত্মীয়-স্বজনও হয়, ড্রপ হবে না, আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।”

রেজাউল করিম বলেন, ঢাকার অন্য ভবনগুলোর বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, একটি বাড়িকেও তারা আইনের বাইরে রাখতে চান না।

পুরান ঢাকায় পাঁচশ বছরের বেশি পুরনো ভবন থাকার তথ্য দিয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, “আমি চাইলেই সেগুলোকে ভেঙে ফেলতে পারব না। বিকল্প ব্যবস্থা করে ওটাকে পরিবেশসম্মত ও ঝুঁকিহীন অবস্থায় নিতে আমরা নতুন করে ডেভেলপমেন্ট করার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে প্রস্তাব করেছি।

অনিয়মের খবর কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তার তদন্ত করা হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “নিউজের উপর ভর করেই ১২টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।”

পূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এ মন্ত্রণালয় এবং আওতাভুক্ত সংস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কর্মীকর্তাদের বদলি করার কথা জানিয়ে একটি উদাহরণও তুলে ধরেন রেজাউল করিম।

“গণপূর্তের একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, সে নাকি এত প্রভাবশালী যে তাকে ছোঁয়া কারো পক্ষে সম্ভব না। শুনলাম সে নাকি সমিতি করে, আমার দল করে, সাংঘাতিক পাওয়ারফুল অ্যাসোসিয়েশনের নেতা। অপরাধের খতিয়ান খুঁজলাম, দেখলাম সে সাংঘাতিক বেপরোয়া।

“তারে বদলির জন্য একটা মানসিক আগ্রহ নিলাম, সে তদবির কারাল বড় বড় জায়গা থেকে, ভাবলাম এত তদবির যখন, তখন তার বিরুদ্ধে আন্তরিক হওয়া উচিত, তাকে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে পোস্টিং দিয়েছি। কোনো তদবির তাকে ঠেকাতে পারেনি। আমরা চাই সকলে মিলে ভালো কিছু করতে। আমি নিজে একটা ওয়াদা করেছি, উপরে আল্লাহ, নিচে শেখ হাসিনা; মাঝখানে আমার কোনো তদবির নেই।”

তবে রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা রাতারাতি উচ্ছেদ করা সম্ভব না বলেই মনে করেন পূর্তমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “রাতারাতি সব উচ্ছেদ করতে পারব না। কিন্তু আমি যদি টেন পারসেন্ট দুর্নীতিকেও স্টপ করতে পারি, আমি মনে করব আমি কিছু পারছি।”

প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা মানসম্মত অবস্থায় আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে ফায়ার সার্ভিসকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

রাজউকের কাজের পরিসর বেড়েছে জানিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে রাজউককে একেবারে শাটডাউন করার মত কোনো অবস্থা নেই। ঢাকার পাশে চারটি স্যাটেলাইট সিটি তৈরি করে ঢাকার ভিড় কমাতে সরকারের যে সিদ্ধান্ত আছে, তার প্রাথমিক সমীক্ষা হয়ে গেছে, এই মুর্হূর্তে রাজউককে নিবৃত্ত করার মত কোনো সুযোগ নেই। তবে নতুন করে ঢাকার বাইরে গিয়ে যাতে কোনো প্রকল্প না হয়, সে বিষয়টা আমি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করছি।”

আরেক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার দায়িত্ব যারা পাবে, তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করা হবে।

“কী প্রক্রিয়ায় তারা ভবনটি ভাঙবেন… সেই প্রক্রিয়া যদি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয় কোনোভাবেই সেই প্রক্রিয়ায় আমরা বিল্ডিং ভাঙতে দেব না।”

অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি আদালত থেকে আদেশ নেওয়ায় রাজউকের করার কিছু থাকে না জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, “গেণ্ডারিয়ায় রাজউকের একটি জায়গা দখল করে রায় নিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কাগজপত্র তৈরি করে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত রায় নিয়েছে। এই রায় হয়ে যাওয়ার পর আর হাতে কিছু থাকে না।

“সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠি দিয়েছি এটাকে রিভিউ করতে হবে। কারণ যে কাগজপত্রের ভিত্তিতে উনারা মালিকানা নিয়েছে, সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধ। আমি কোনোভাবেই জায়গা হালাল করতে দেব না তাদেরকে।

“যদি আপিল বিভাগে রিভিউ করতে না পারি আমি সহকারী জজ আদালতে নতুন করে মামলা শুরু করব। গেণ্ডারিয়ার সকলের পরিচিত মানুষের পানীয় জলের জন্য পুকুর, সেই পুকুরসহ বিশাল এরিয়া দখল করে মার্কেট করবেন- সেটা হবে না।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সংগঠনটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত ব্যক্তব্য দেন।